২৫ বছর ধরে নিখোঁজ

ঝিনুক চাষ শিখতে এসে পেলেন পরিবারের সন্ধান

আসাদুজ্জামান মিরাজ আসাদুজ্জামান মিরাজ , উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৭:০০ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৩

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে ২৫ বছর আগে হারিয়ে যায় ছয় বছরের শিশু শাহানারা। এখন তার বয়স ৩১ বছর। নিজ গ্রামে ঝিনুক চাষ শিখতে এসে পেয়েছেন পরিবারের খোঁজ। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার ধুলাস্বার এলাকায় ময়ের সঙ্গে দেখা হয় তার। হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে পেয়ে খুশি মা শিরীন আক্তারও।

শাহানারা উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়নের পশ্চিম ধুলাস্বার গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের আ. খালেকের স্ত্রী। তার ১৩ বছরের এক কন্যা এবং পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে কলাপাড়া থেকে হারিয়ে যায় শাহানারা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি মা শিরিন বেগম। শাহানারা একমাস আগে মৎস্য বিভাগের একটি ট্রেনিংয়ে কাজ করতে আসেন নিজ গ্রামে কিন্তু তখনো জানতেন না এটাই তার জন্মস্থান। তবে তার সন্দেহ হচ্ছিল গ্রামটি তার কেন যেন পরিচিত লাগে। এক পর্যায়ে গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সুজন নামে যুবকের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পৌঁছান তিনি।

পরিবারকে ফিরে পেয়ে জীবনের নতুন অধ্যায়ের কথা বলছেন শাহানারা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তখন আমি কীভাবে বরিশাল যাই সেটুকু আমার মনে নেই। তবে ওখানে এক নারী আমাকে পেয়ে বরিশালের একটি এতিম খানায় দিয়ে আসে। আমি সেখানেই বড় হই। আমার নাম রাখা হয় ইয়াসমিন। ১৬ বছর আগে আমাকে বিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। আমি এখন বরিশাল বসবাস করি।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস আগে আমি সরকারিভাবে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ট্রেনিং করতে এ গ্রামে আসি। আসার পর থেকেই কেমন যেন আমার কাছে গ্রামটা পূর্ব পরিচিত মনে হয়। এক পর্যায়ে আমি এখানের পরিচিত একজনের সহযোগিতা নেই। পরে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান এবং অনেকের সহযোগিতায় আমি পরিবার এবং মায়ের খোঁজ পাই।

শাহানারার (ইয়াসমিন) মা শিরীন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ছয় বছর। তারে আমি খুঁজি নাই এমন কোনো জায়গা নেই। প্রতিদিন কান্না করি মেয়ের জন্য। আল্লাহ মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

শাহানারার (ইয়াসমিন) স্বামী আ. খালেক (৬০) জাগো নিউজকে বলেন, ১৬ বছর আগে আমার প্রথম স্ত্রী মারা যায়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমি তাকে বিয়ে করি। আমাদের দুটি সন্তান আছে। এতদিন জানতাম যে তার কোনো পরিবার নেই। তবে আজকে থেকে নতুন পরিবার পেলাম। এর থেকে আনন্দের কী হতে পারে। পরবর্তী জীবনগুলো আমরা একসঙ্গে কাটাতে চাই।

ঝিনুক চাষ শিখতে এসে পেলেন পরিবারের সন্ধান

স্থানীয় উদ্যোক্তা সুজন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, আমি ঝিনুক চাষ করি। ঝিনুকের ট্রেনিং করতে এসে শাহানারা এ গ্রামকে তার পূর্ব পরিচিত মনে হয় এমনটা জানায়। আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় তার পরিবারকে খুঁজে পাই এবং তাদের দেখা করিয়ে দেই।’

ধুলাস্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার আমার কাছে আসার পর আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারের সন্ধান পাই। পরে তার হারিয়ে যাওয়ার কথা উভয় পক্ষের কাছে শুনে নিশ্চিত হই যে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি এই শাহানারা। আজকে তিনি তার মায়ের কাছে এবং পরিবারের কাছে ফিরেছে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।