ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর মেয়র হতে চেয়েছিলেন এমটিএফইর সিইও ইবাদ

আবুল হাসনাত মো. রাফি আবুল হাসনাত মো. রাফি , ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৯:০২ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২৩
মোবাশ্বিরুল ইবাদ

প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পর দেশব্যাপী আলোচনায় দুবাইভিত্তিক কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ বা এমটিএফই। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে দেশের হাজারও পরিবার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমটিএফইর প্রতারণায় উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির এক সিইও মোবাশ্বিরুল ইবাদ ওরফে মিশুর নাম। তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে তার নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

মোবাশ্বিরুল ইবাদ ওরফে মিশু ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার দুইবারের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মাহবুবুল হুদার একমাত্র ছেলে। তার একমাত্র বোন মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।

আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকা খুইয়ে বিনিয়োগকারীদের বোবা কান্না

মোবাশ্বিরুল ইবাদ ওরফে মিশু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ২০১৮ সালে অবসরে যান। এরপর তিনি জেলার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল থেকে তিনি মনোনয়ন পাননি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদে ছিলেন।

পৌরসভা নির্বাচনের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০ অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এরমধ্যে প্রয়াত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মাহবুবুল হুদার একমাত্র ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোবাশ্বিরুল ইবাদও ছিলেন। তারা মনোনয়ন কিনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেন। শেষ পর্যন্ত মিসেস নায়ার কবির আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পান। দলীয় কোনো কর্মসূচিতে মোবাশ্বিরুল ইবাদকে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জেলা শহরের মেড্ডায় মোবাশ্বিরুল ইবাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। বাড়ির সামনে বড় একটি গেট লাগানো আছে। এর বাউন্ডারি দেওয়ালের ভেতরে পুরাতন টিনের কয়েকটি ঘর।

আরও পড়ুন: এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

এসময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা তাকে মিশু নামেই চিনি। উনি মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনী থেকে নিজেই অবসর নিয়েছিলেন। তার বিষয়ে সবাই ভালো জানেন। তার বাবা ছিলেন স্বনামধন্য রাজনৈতিক নেতা কিন্তু যে কথাগুলো শুনলাম তা খুবই দুঃখজনক।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, মিশু ভাইয়ের আম্মা তার বোনের সঙ্গে আমেরিকাতে বসবাস করেন। মিশু ভাইও এখন দুবাই থাকেন। কেউই তেমন এই বাড়িতে আসেন না। বছরে ইচ্ছা হলে ২/১ বার আসতেন। বাবার স্মৃতি রক্ষায় পুরাতন টিনের ঘরটি রেখে দিয়েছেন। কিন্তু এই ব্যবসার (এমটিএফই) সঙ্গে যে মিশু ভাই জড়িত গ্রামের কেউই জানতেন না।

মোবাশ্বিরুল ইবাদের গ্রামের বাড়িঘর দেখাশোনা করেন আলী হোসেন নামে এক কেয়ারটেকার। তিনি বলেন, মিশু ভাই কোরবানির ঈদের পর বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আর আসেননি। আমি ও আরেকটা পরিবার এখানে বসবাস করি। তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হয় না।

আরও পড়ুন: এমটিএফই অ্যাপে প্রতারণা, জয়পুরহাটে থানায় অভিযোগ

অনলাইনভিত্তিক অ্যাপ এমটিএফইর ফাঁদে পড়ে জেলার তিন শতাধিক নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। স্বল্প বিনিয়োগে কম সময়ে বেশি লাভের ফাঁদে পড়া ওইসব মানুষের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন প্রতারকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে দুবাইয়ে অবস্থান করা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) মোবাশ্বিরুল ইবাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমরা জানতাম না এমটিএফই একটি মাল্টি লেভেল কোম্পানি। আমাদের বলা হয়েছিল শেয়ার মার্কেট ব্যবসা। আমি নিজেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

তিনি আরও বলেন, গত ৬ আগস্ট থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেয় তারা। আমার বিপুল অঙ্কের টাকা কেটে নিয়ে গেছে। এখন উল্টো বলছে, আমার কাছে টাকা পাবে না হলে মামলা করবে। আমি দুবাই নিজের ব্যবসা করতে এসেছি, পালিয়ে আসিনি। যারা এর সঙ্গে জড়িত আমিও তাদের শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটির এই জেলায় কোনো কার্যালয় আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও আমরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।