গ্রেনেড হামলা
ভয়াবহ সেই দিনের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন কাশেম
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন আবুল কাশেম। তিনি ওই ঘটনায় আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শী। ৫৩ বছর বয়সী কাশেম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য। দেশব্যাপী তিনি ‘আইভি কাশেম’ নামেই পরিচিত।
২১ আগস্টে দুই পা বিচ্ছিন্ন আইভি রহমানকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন আবুল কাশেম। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামিছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক।
রোববার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ১৯ বছর আগের সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলার বিষয়ে কাশেম বলেন, সেই দৃশ্য ভয়াবহ, বীভৎস। মানুষের হাত এক জায়গায়, পা আরেক জায়গায়, শরীরের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন। অসংখ্য মানুষের রক্তাক্ত শরীর। এই দৃশ্যগুলো মাঝে-মাঝে রাতে মনে পড়লে ঘুম হয় না। এখনো শরীর শিউরে ওঠে। এক কোনায় ঝিম ধরে বসে থাকি। এটা বয়ে বেড়ানো খুব কঠিন।
আরও পড়ুন: ‘আমাকে লাশের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়’
বিচারের রায় কার্যকর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেই দিনটার মূল টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি এখন সরকারপ্রধান। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আসামিরা যে যেখানে আছে তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য। তাদেরকে অতি দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানকে বাংলার মাটিতে এনে দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে কাশেম বলেন, সমাবেশস্থলে আমি প্রিয় নেত্রীর গাড়ির কাছে ছিলাম। বিকট আওয়াজ, মানুষের দৌড়াদৌড়ি। আমি একপর্যায়ে পার্টি অফিসের পাশের মার্কেটের কলাপসিপল গেটের কাছে মানুষের ধাক্কায় পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পরে ঘাড় তুলে দেখি আমাদের নেত্রীকে বিভিন্নজন গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। আমি তখন সাংবাদিক সাহেদ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসা করি, আপার (শেখ হাসিনা) কী অবস্থা? আমরা জানতাম, আপা না থাকলে আমাদের বাঁচা অর্থহীন। আমরা কেউই থাকবো না। এর কিছুক্ষণ পরেই সাহেদ চৌধুরী আমাকে বললেন, আপা কোনোরকম আছেন।
আরও পড়ুন: বিচারকের অসুস্থতায় থমকে আছে মামলার আপিল শুনানি
তিনি বলেন, তারপর মাঠের দিকে তাকালাম, অসংখ্য নেতাকর্মী রক্তাক্ত। হানিফ ভাই, সুরঞ্জিত দাদা, সাহারা আপাকেও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখি। আমি সাহারা আপাকে গাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি তার ড্রাইভারের কাছে। এরপরই আইভি চাচিকে খুব করুণ অবস্থায় দেখি রাস্তায় শুয়ে আছেন। দুই পা বিচ্ছিন্ন, চোখগুলো উল্টানো। তাকে উঠিয়ে বোঝার চেষ্টা করি বেঁচে আছেন কি না। ঘটনাস্থলেই তার দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। কী বীভৎস! এটা নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ওই দৃশ্যটা দেখলে আসলেই এটা ভাবা যায় না, কল্পনা করা যায় না।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসি এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
এমআরআর/এমএস