এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৮:০৮ এএম, ২০ আগস্ট ২০২৩

নওগাঁয় ‘এমটিএফই’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত আয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন হাজারো মানুষ। একসময় শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এই অ্যাপটি। এতে টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত আয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু হঠাৎ অ্যাপটি থেকে টাকা ওঠাতে না পেরে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা মানুষগুলো এখন সর্বস্বান্ত। উল্টো তাদের ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই।

জানা গেছে, বিদেশি অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) একটি অনলাইন ট্রেডিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এমটিএফই অ্যাপটি চালু থাকা অবস্থায় অ্যাকাউন্ট চালু করার জন্য সর্বনিম্ন ২৬ ডলারের সমপরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হতো। সেই টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। আর এসব প্রলোভন দেখিয়ে প্রচারণা চালান কিছু যুবক। আর এতেই হুমড়ি খেয়ে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খোলেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সেই অ্যাকাউন্টে কেউ জমি বন্ধক রেখে, কেউবা জমানো টাকা আবার কেউবা বিভিন্ন এনজিও থেকে ধারদেনা করে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গোটা জেলায় কয়েকজন এমটিএফই অ্যাপের সিও হিসেবে কাজও করতেন। কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে কোম্পানি থেকে তাদের কমিশন দেওয়া হতো।

আরও পড়ুন: ‘ওঠাও বাচ্চা’তে সর্বস্বান্ত বগুড়ার মানুষ

ভুক্তভোগীরা জানান, এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিনোয়োগ করা টাকার ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারা আর টাকা ওঠাতে পারছিলেন না। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এমটিএফই। লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝাও ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন সর্বস্বান্ত। তবে প্রথম দিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা মুনাফা তুলে নিয়েছেন। শেষের দিকে যারা ছিলেন তারা সর্বস্বান্ত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওগাঁ শহরের এক ভুক্তভোগী জানান, একটু লাভের আশায় ধার করে এক লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিছুদিন তারা ওই টাকার ওপর লাভও দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন আগে থেকে অ্যাপটি থেকে টাকা ওঠানো বন্ধ হয়ে যায়। এখন শুনছি তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন ধারের টাকা পরিশোধ করবো কীভাবে সেই চিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। সব ডলার কেটে নিয়ে উল্টো অ্যাকাউন্টে বিশাল অংকের মাইনাস ডলার ধরিয়ে দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা পরিশোধও করতে বলেছে। ২৪ ঘণ্টা পর আজ আবার তাদের অ্যাপে নোটিশ দিয়েছে যে, ‘২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আপনি ঋণ পরিশোধ করেননি। আপনাকে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো, এরমধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে আপনাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।’

নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, একজন এসে বললো এমটিএফইয়ে ইনভেস্ট করলে নাকি টাকা আয় করা যাবে। পরে একটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে সেখানে বিনিয়োগ করি। এখন ওই অ্যাপসে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। টাকাগুলো না পেলে এনজিওর টাকা পরিশোধ করবো কীভাবে? কোনো কিছু বুঝতে পারছি না।

এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী নাঈম বলেন, আমি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। একজনের পাল্লায় পড়ে লাভের আশায় কিছুদিন আগেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিন্তু তারা টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলো। এখন কীভাবে কী করবো কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আরও পড়ুন: ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ অ্যাপের ফাঁদে সর্বস্বান্ত অর্ধকোটি গ্রাহক

জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় এমটিএফই অ্যাপের সিও পরিচয় দেওয়া লতিফুল লিটন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, তিনি কোনো এমটিএফই অ্যাপের সিও ছিলেন না। তবে তিনি তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে নিজের মতো করে এমটিএফই অ্যাপে কাজ করতেন।

এমটিএফইর ফাঁদে সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

এমটিএফই অ্যাপের সিও হিসেবে পরিচয়দানকারী রানীনগর উপজেলার রাব্বী জানান, প্রথমে মহাদেবপুর উপজেলার লতিফুল নামে একজন তাকে লিংক দিয়েছিলেন এবং সেখানে কাজ করার জন্য বলেন। পরে তিনি সেখানে বিনোয়োগ করেন এবং বেশ কয়েকজনকে উদ্বুদ্ধ করেন। তবে কাউকে কোনো ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।