সংসার চালাতে হেঁটে মাছ বিক্রি করেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা

শাওন খান
শাওন খান শাওন খান , জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২৩

অভাব-অনটনের সংসারের হাল ধরতে দশ কিলোমিটার দূরের বাজার থেকে মাছ কিনে তা বিক্রি করেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা হালদার। কোনোদিন মাছ বিক্রি করতে না পারলে থাকতে হয় উপোস। স্বামী প্যারালাইজড হওয়ায় এভাবেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

চন্দনা হালদার বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের হাওলা গ্ৰামের দিনমজুর বিজয় হালদারের স্ত্রী।

জানা যায়, তিনজনের সংসারে স্বামী বিজয় হালদার এক সময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে বিভিন্ন সময় সাইকেলের পেছনে ঝুঁড়ি বেঁধে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন। কিন্তু ৫ বছর আগে হঠাৎ প্যারালাইজড হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী বিজয় হালদার। তাই স্বামীর চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে মাছ বিক্রি শুরু করেন চন্দনা।

বাজার থেকে মাছ কিনে হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে বিক্রি করেন তিনি। কিছু মাছ অবিক্রিত থেকে গেলে সেগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতে হয় তাকে।

অন্তঃসত্ত্বা চন্দনা হালদার জানান, প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে হেঁটে দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার গৈলা পাইকারি মাছের বাজারে গিয়ে মাছ কেনেন। পরে সেই মাছ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। মাছ বিক্রি করে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হলে তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

চন্দনা আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঝে মাঝে মাছ বিক্রি করতে না পারলে তখন উপোস থাকতে হয় তাদের। বসবাসের ঘরটি ছাড়া চাষাবাদের জন্য তেমন কোনো ফসলি জমিও নেই তাদের। কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি বলে জানান তিনি।

চন্দনার স্বামী দিনমজুর বিজয় হালদার জানান, ৯ বছর আগে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দুলালপাড়া গ্রামের কালিপদ মন্ডলের মেয়ে চন্দনা হালদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। দাম্পত্য জীবন সুখের কাটলেও হঠাৎ ৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেসময় তাদের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার।

গৈলা মাছ বাজারের পাইকারী আড়ৎদার মহাদেব মন্ডল বলেন, চন্দনা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েও অন্যান্য পুরুষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার (ডাকের) মাধ্যমে মাছ কিনে বিক্রি করে সংসার চালান। আমার ব্যবসায়ীক জীবনে এমনটা কখনো দেখিনি।

স্থানীয় রত্নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদার জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চন্দনার পরিবারকে দেওয়া হবে। এছাড়া পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির জন্য প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, মাছ বিক্রেতা চন্দনা হালদারের পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এরইমধ্যে সমাজকল্যাণ পরিষদের মাধ্যমে তাকে আর্থিকভাবে সহয়তা করা হয়েছে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।