জ্ঞানব্রতী যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও সাম্যবাদী তাত্ত্বিক অধ্যাপক যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ ১৮ আগস্ট। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারও অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ‘জন্মদিন উদযাপন পর্ষদ’। শুক্রবার বিকেলে নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকায় যতীন সরকারের নিজস্ব বাসভবন ‘বানপ্রস্থে’ এ অনুষ্ঠান হবে।
জন্মদিন উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক স্বপন পাল ও সদস্য সচিব পল্লব চক্রবর্তী জানান, অনুষ্ঠানের মধ্যে যতীন সরকারের সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রসংশাপত্র পাঠ, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন, আবৃত্তি ও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রভৃতি রয়েছে।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জ্ঞানেন্দ্র সরকার ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। মা বিমলা বালা সরকার ছিলেন গৃহিণী। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা এই জ্ঞানব্রতীর ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কর্মী, সংগঠক ও অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বহু সংগঠনের।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের মদতে ঘাতকচক্র যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে এরপর তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের আটক করে বিনা বিচারে কারাবন্দি করে। সেসময় যতীন সরকারকেও দীর্ঘ ১৮ মাস কারাবাসে থাকতে হয়েছে।
ছাত্রজীবনে লেখালেখি শুরু হলেও যতীন সরকারের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে, তখন লেখকের বয়স ৫০ বছর। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের কবি গান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, পাকিস্তানের ভূত দর্শন, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান চেতনা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত-ভবিষ্যৎ, বিনষ্ট রাজনীতি ও সংস্কৃতি, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, ভানার মুক্তবাতায়নসহ প্রায় ৫৭টির মতো বই।
একই সঙ্গে তিনি সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। ‘সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র নামে’ তত্ত্বমূলক ত্রৈমাসিক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল এ লেখকের প্রায় প্রতিটি বইয়ে গভীর দার্শনিকতা ও ইতিহাস ছাড়াও সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন। ৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী কানন বালা সরকারকে নিয়ে শেঁকড়ের টানে তিনি চলে আসেন নিজ জেলা নেত্রকোনায়।
যতীন সরকার বর্তমানে বসবাস করছেন শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাসায়। ‘বানপ্রন্থ’ নামের ওই বাসাটি এখন তার মতাদর্শে বিশ্বাসী সতীর্থ, শিষ্য, ছাত্রদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যার জনক। ছেলে সুমন সরকার পেশায় চিকিৎসক, স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকেন। মেয়ে সুদীপ্তা সরকার অতিরিক্ত জেলা জজ ও জামাতা রাজিব সরকার উপসচিব হিসেবে কর্মরত।
এইচ এম কামাল/এমকেআর