রোহিঙ্গারা কঠিন সময় পার করছেন: কংগ্রেস প্রতিনিধিদল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, কক্সবাজারে আশ্রয়ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও সমস্যা একই।

তারা আরও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব বহন করা এবং তাদের সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা কঠিন। তাই রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধিদল।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারে শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা হঠাৎ করেই সমাধান সম্ভব নয়। তাই তাদের আশা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করলে তারা তাদের পরিবার চালাতে পারবেন। এ কঠিন কাজটি বাস্তবায়ন করতে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আরও পড়ুন: ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে’

ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং তাদের সাহায্যে প্রত্যেক দেশের চেষ্টা এবং বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশাবাদী, খুব শিগগির রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়া, লেখাপড়ার ব্যবস্থা, বর্তমানের জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দাবি জানিয়েছেন।

jagonews24

এসব বিষয় প্রতিবেদন আকারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবহিত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার উদাহরণ তৈরি করেছে। এজন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

প্রতিনিধিদলের সদস্য রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিক বলেছেন, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে যে তথ্য পেয়েছি, তা লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হবে। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

আরও পড়ুন: চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কাজ চলমান

সোমবার সকালে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে আইএসসিজির অফিস হয়ে ক্যাম্পে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আছেন ১১ সদস্য। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছার এবং প্রায় চার ঘণ্টা সময় সেখানে অবস্থান করেন।

jagonews24

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর জানান, কংগ্রেস প্রতিনিধিদল প্রথমে উখিয়ার বালুখালীতে ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে যায়। সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে রোহিঙ্গাদের ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম তদারকি করেন এবং ডাটা কার্ডের বিভিন্ন সুবিধা নিতে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুনুর রশীদ জানান, বালুখালীতে ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কুতুপালং ১১ নম্বর ক্যাম্পের সি/১ ব্লকে অবস্থিত ইউএস অর্থায়নে পরিচালিত সান লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন তারা। সেখানে মিয়ানমারের ক্যারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি তদারকি করেন। এরপর ডব্লিউএফপির ই-ভাউচার আউটলেট এবং রোহিঙ্গারা ডাটা কার্ডের মাধ্যমে কিভাবে রেশন গ্রহণ করে তা পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন স্টোর পরিদর্শন করেন। এসময় রোহিঙ্গারা একটি আবেদনপত্র দেন প্রতিনিধিদলকে।

jagonews24

পরে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআরের উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে প্রতিনিধিদল। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আইন সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। সবশেষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এসময় রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার হাত বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করেন তারা।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ৩.৩৫ মিলিয়ন ইউরো দেবে ইইউ

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানান, প্রতিনিধিদলটির সদস্যরা ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে আলাপ করেন। বিকেলে তারা কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসে এসে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এখানে ছিল আরও কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা। ফলে সব মিলিয়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১২ লাখের বেশি।

jagonews24

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বর্তমানে বিশাল এ জনগোষ্ঠী নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার বারবার আশ্বাস দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়নি। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখানকার অবস্থা দেখতে বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রায় ক্যাম্পে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধিদল ক্যাম্প পরিদর্শন করে সোমবার।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।