ফেনীতে হাঁসের ডিমের হালি ৭২ টাকা, মুরগি ৬২
সারাদেশের মতো হঠাৎ করে ফেনীতেও ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে হাঁসের ডিমের দাম হালিতে ১৬ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া মুরগির ডিমের দাম প্রতি হালিতে ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ার অজুহাতে ডিমের দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ী ও খামারিদের।
রোববার (১৩ আগস্ট) ফেনী বড়বাজার, সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট, মহিপাল বাজার, মুক্ত বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে পাইকারি পর্যায়ে মুরগির ডিম প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেই ডিম পাইকারি পর্যায়ে প্রতি হালি ৬০ ও মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫৬ টাকা হালির হাঁসের ডিম খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়।
বাজারে ডিম কিনতে আসা দিনমজুর জয়নাল আবেদিন বলেন, মাছ ও মাংসের দাম বেশি হওয়ায় গত দুই মাস ধরে তিনি মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ডিম কেনেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের মাংসের আবদার থাকলেও দামের সঙ্গে আয়ের মিল না থাকায় আজও ডিম কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, গত সোমবার তিনি প্রতি হালি ডিম কিনেছেন ৪৬ টাকায়। চারদিনের ব্যবধানে আজ একই দোকানে সেই ডিম কিনতে গেলে ৬০ টাকা হালি চাচ্ছেন।
ক্রেতা এমরান পাটোয়ারী বলেন, গত সপ্তাহে তিনি এক হালি হাঁসের ডিম কিনেছেন ৬০ টাকায়। তবে আজ দোকানে গিয়ে দেখেন, সেই ডিম এক লাফে ৭২ টাকা হয়েছে।
তবে দাম বাড়লেও লাভ বাড়েনি বলে দাবি করেছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ডিম ব্যবসায়ী নুর নবী বলেন, মুরগির খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ বিল ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি হালি ডিমে দু-তিন টাকা লাভ হতো। এখনো লাভ তাই আছে। শুক্রবার খামারে পাইকারিভাবে একটি ডিমের দাম পড়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর পরিবহন, দোকান ভাড়া এবং শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলে একটি ডিমের দাম দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা। এতে করে একটি ডিম ১৫ টাকা বিক্রি ছাড়া উপায় নেই।
বিসমিল্লাহ ডিমের আড়তের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন রুবেল বলেন, পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। কেনা দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
খামারি আবুল ফোরকান জানান, তার খামারে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মুরগি রয়েছে। মুরগির খাদ্য, ওষুধ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও খরচ পোষাতে বেশি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে খামারে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। শনিবার তার খামার থেকে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে প্রায় ছয় হাজার ডিম বিক্রি করেছেন। এরপরও তার খরচ তুলতে কষ্ট হবে বলে তিনি দাবি করেন।
ডিমের আকস্মিক দামবৃদ্ধির বিষয়ে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির পাঁচগাছিয়া রোড শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, বাজারের প্রায় সবকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বাড়িয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বন্যা, ভারী বৃষ্টি ও উৎপাদন কম হওয়ায় পাইকারি বাজারে ডিমসহ আরও কিছু সবজির দাম বেড়েছে। কেনা বেশি পড়ায় তারা বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ডিমসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে তদারকি করা হচ্ছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমআরআর/এমএস