এবার ৩৯০ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন এনামুল
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক। ২২৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ২০২২ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ পাটচাষির সম্মাননা পেয়েছেন। আশানুরূপ লাভজনক হওয়ায় চলতি বছরে ৩৯০ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন তিনি।
২০২৩ সালের ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের শ্রেষ্ঠ পাটচাষি হিসেবে এনামুল হককে সম্মাননা দেওয়া হয়।
পাটচাষ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এনামুল হক বলেন, পাটের গৌরবময় অতীত ইতিহাস রয়েছে। একসময় পাট সোনালি আঁশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত ছিল। সেসময় পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে এদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসতো। পাটের সেই সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে আমার মতো অনেক কৃষক আবারও ব্যাপকভাবে পাট চাষ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: পানির অভাবে কমছে পাটচাষ
তিনি বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচ, উৎপাদন ভালো, লাভজনক ও সরাসরি পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় পাটচাষে কৃষকরা ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগও পাটচাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে। এতে কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ১৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেন এনামুল হক। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিবছরই পাটের আবাদ বাড়াতে থাকেন। ২০২২ সালে ২২৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে দেশের শ্রেষ্ঠ চাষি হিসেবে পুরস্কার পান। এবার ৩৯০ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাটের পাশাপাশি ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, সরিষা, মসুর ডালসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন এনামুল হক।
মুলাডুলি ইউনিয়নে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের আওতাধীন মুলাডুলি কৃষি খামার রয়েছে। এ খামারের তিন হাজার ৩০০ বিঘা জমিতে আখের আবাদ হয়। আখের জমির উর্বরতা বাড়াতে দু একবছর পরপর অন্য ফসল চাষাবাদ করতে এসব জমি প্রতিবছরই স্থানীয় কৃষকদের কাছে লিজ দেওয়া হয়। এ জমি লিজ নিয়ে পাট ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করেন এনামুল হক।
আরও পড়ুন: পাটক্ষেতে পোকার আক্রমণ, কীটনাশকেও মিলছে না প্রতিকার
লিজের পাশাপাশি নিজের কয়েক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন কৃষক এনামুল। এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে সার-বীজ, শ্রমিক, চাষাবাদ খরচ বাবদ খরচ হয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। পাটের ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় পাট বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকার। এতে কৃষকরা লাভবান হয়। এছাড়া পাটকাঠিও ভালো দামে বিক্রি হয়।
কৃষক এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলায় পড়াশোনার ফাঁকে বাবা-চাচাদের সঙ্গে কৃষিজমিতে কাজে যেতাম। তখন থেকেই কৃষিকাজ নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। তবে কখনো ভাবিনি কৃষিতে কোনো পদক পাবো। দেশসেরা পাটচাষি পদক পাওয়ার পর পাটচাষ বাড়ানোর প্রতি দায়িত্ববোধ আরও বেড়ে গেছে। আমি নিজে পাট চাষের পাশাপাশি অন্য কৃষকদের পাট চাষে উৎসাহিত করে আসছি।
দেশসেরা পাটচাষি হিসেবে পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমার জীবনে একটি শ্রেষ্ঠ উপহার। এ পুরস্কার আমাকে পাটচাষসহ কৃষির উন্নয়নে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে। এজন্য নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা আমাকে জমি লিজ দিয়ে পাটচাষে সহযোগিতা করেছেন।’
আরও পড়ুন: সোনালি আঁশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, কৃষক এনামুল হক দেশের শ্রেষ্ঠ পাটচাষি পদক অর্জন করে ঈশ্বরদীবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তিনি চলতি বছর ৩৯০ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। নিজে পাটচাষের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের পাটচাষে উদ্বুদ্ধ করছেন।
এসআর/এএসএম