ফেনীতে বন্যা
পানি নামার সঙ্গে জেগে উঠছে ক্ষত
মুহুরী নদীর তিনটি স্থানে ভেঙে ফেনীর সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, কৃষি ও মৎস্যখাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন বন্যার পানি নামার সঙ্গে জেগে উঠছে ক্ষত চিহ্ন।
ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য মতে, ফুলগাজী উপজেলার ১ হাজার ১৪৫টি পরিবারের ১৪ হাজার ৫০০ বাসিন্দা ও ১ হাজার ১৪৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর রোপা আমন, ১৫ হেক্টর সবজি, সাড়ে ৪৪ হেক্টর আয়তনের ৩৫০টি পুকুরের ২৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি অর্ধলাখ মানুষ
এদিকে, পরশুরাম উপজেলার ৫৫০টি পরিবারের ২৬ হাজার বাসিন্দা ও ৫৫০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় ১৬৫ হেক্টর রোপা আমন, ৫ হেক্টর সবজি, ৩০টি পুকুরের প্রায় ২০ টন মাছ ও সাড়ে ৪ টন পোনা ভেসে যায়।
দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, ১ হাজার ৬৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলগাজীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানি নামতে শুরু করায় ক্ষত চিহ্নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। ভাঙনের স্থান দিয়ে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে স্থানীয়রা কোনোরকমে পার হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ফসলি জমির ক্ষতও দৃশ্যমান হচ্ছে। মৎস্যচাষিরা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরগুলোর পাড় মেরামতের কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ফুলগাজী-পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
পরশুরামের মৎস্যচাষি আরমান হোসেন জানান, তার তিনটি পুকুরে অন্তত ২০ লাখ টাকার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে।
ফুলগাজীর কৃষক খালেক মুন্সি বলেন, সেচ দিয়ে দুই একর জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু বন্যায় আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
আগামী ১৭ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরীক্ষার্থী আহনাফ আকিব জানান, পরীক্ষার আর মাত্র ছয়দিন বাকি। চারদিকে থই থই পানি। ঘরে পানি, সড়কে পানি। পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না।
ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ঢলের পানি সহসাই না নামলে ডুবে যাওয়া জমির ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কার কাজ করা হবে।
আরও পড়ুন: ‘পানি না সরলে ধানের চারা পচে সর্বনাশ হয়ে যাবে’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রাফিউস সাজ্জাদ বলেন, নদীর নাব্যতা ও সরু হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ১২২ কিলোমিটার নদী খননসহ দুই পাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমআরআর/জিকেএস