বিরল রোগে আক্রান্ত লাভলু, চিকিৎসায় প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২৩

নীলফামারীর কচুকাটা বন্দরপাড়া এলাকার বাসিন্দা লাভলু ইসলাম। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভিটেমাটিহীন লাভলু ইসলাম ছোট-ভাই বোনদের নিয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর দেওয়া ঘরে। টিউশনি করিয়ে চালাতেন তিন ভাই-বোনের সংসার। তবে দেড় বছর থেকে সংসারের ভরসার একমাত্র অবলম্বন লাভলু ভুগছেন বিরল রোগে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত এই রোগটি দেখা যায় না। চিকিৎসায় প্রয়োজন হতে পারে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। তবে এরপরও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন কি না তা বলা যাচ্ছে না।

জানা যায়, প্রথমে পায়ে ব্যথার জন্য স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন লাভলু। তবে স্থানীয় ডাক্তার রংপুরে চিকিৎসা নিতে বলেন। পরে রংপুর তছরউদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানকার ডাক্তার জানান রংপুরেও এই রোগের চিকিৎসা নেই। যেতে হবে ঢাকা পিজি হাসপাতালে। সেখান চিকিৎসকরা জানান, রোগটির নাম পার্কস ওয়েবার সিনড্রোম এবং হয়ত দেশে সেটিই প্রথম।

এ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন ১০ লক্ষাধিক টাকা। তবে পুরোপুরি ভালো হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। এমন অবস্থায় অসহায় লাভলুর পক্ষে এত টাকা চিকিৎসা ব্যয় জোটানো সাধ্যের বাইরে। বিরল এই রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।

লাভলু ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর টিউশনি করিয়ে তিন ভাই-বোনের সংসার চালাচ্ছি। আমার টিউশনি ছাড়া কোনো ইনকাম নেই, থাকি অন্যের ঘরে। পিজি হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন, দেশে এই রোগ প্রথম। প্রথমে থেরাপি দেবে তারপর নাকি চিকিৎসা। প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। এত টাকা আমি কই পাবো?

লাভলু আরও বলেন, টিউশনির সামান্য টাকা দিয়ে এতদিন জীবিকানির্বাহ করে আসছি। এলাকাবাসী কিছু সহযোগিতা করেছেন তা দিয়ে হয়ত কয়েকদিন চিকিৎসা চলবে। সরকার ও দেশের বিত্তবানদের প্রতি চাওয়া, তারা যদি আমাকে সাহায্য করেন তাহলে হয়ত আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।

লাভলুর ভাই নাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই টিউশনি করিয়ে আমাদের চালাতো। হঠাৎ ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ আমাদের পরিবারের অবস্থা এখন একদম ভালো না। তার ওপর আমার ভাইকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া যেন আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে। সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ জানাবো তারা যেন আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন।

লাভলুর প্রতিবেশী খুশি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, লাভলু অনেক মেধাবী ছাত্র। সে প্রাইভেট পড়িয়ে ভাই-বোনদের চালাচ্ছে। নিজের কোনো থাকার যায়গা নাই। গ্রামবাসী কিছু সাহায্য করেছি। তবে তা দিয়ে তো চিকিৎসা হবে না। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমাদের অনুরোধ যদি ছেলেটাকে সাহায্য করে হয়ত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

স্থানীয় রশিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ছেলেটা ছোটবেলা থেকে কষ্ট করছে। সে শিক্ষিত একটা ছেলে। অন্যের বোঝা হয়ে যেন না থাকে। তাই সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তাকে সহযোগিতা করে।

বিরল এই রোগ নিয়ে জাগো নিউজের কথা হয় নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম রসুল রাখির সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত এই রোগটি দেখা যায় না। এটি একটি জেনেটিক রোগ। পুরোপুরি সেরে না উঠলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা আশা করি, যেন লাভলুর ভালো চিকিৎসা হয়।

রাজু আহম্মেদ/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।