বারবার খেতে ইচ্ছা করে কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই
স্বাদে-ঘ্রাণে অপূর্ব কুষ্টিয়ার কুলফি মালাইয়ের জুড়ে নেই। একবার খেলেই বারবার খেতে ইচ্ছা করে। এর সুখ্যাতি দেশজুড়ে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ও শিলাইদহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় কুলফি মালাই তৈরির সঙ্গে জড়িত। বছরের ছয়মাস চলে বেচাকেনা। এতে বেশ লাভবান হন তারা।
প্রায় ৪০ বছর ধরে কুলফি মালাই বানিয়ে আসছেন আলতাফ শেখ। তার বাবা হারেজ শেখও ৬০ বছর কুলফি বানিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর আলতাফরা তিন ভাই কুলফি মালাই বানিয়ে আসছেন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর এখন দুই ভাই কুলফি বানাচ্ছেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুলফি মালাই তৈরির জন্য সকালের দিকে গরুর দুধ কেনেন বাড়ির লোকজন। এরপর দুপুর থেকে চুলায় চাপিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। ৭-৯ ঘণ্টা একটানা জ্বালিয়ে রং দেখে তারা বুঝতে পারেন আর জ্বাল দেওয়া লাগবে কি না। তখন ঢেকে রাখেন। পরে সকালে এর সঙ্গে চিনি-এলাচ, বাদাম ও কিসমিস মিশিয়ে টিনের কৌটায় ঢালেন। গমের আটা দিয়ে মুখ আটকে দেওয়া হয়। এরপর লবণ আর বরফ রাখা হয় ওই পাত্রে। এতেই জমে যায় মালাই। এরপর লালসালু মোড়ানো হাঁড়ি নিয়ে বিক্রেতারা কুলফি মালাই বিক্রির জন্য শহরে চলে আসেন। আকারভেদে ২০-১০০ টাকায় বিক্রি হয় সুস্বাদু এ কুলফি মালাই।
আরও পড়ুন: চার যুগ ধরে সেরা আদি গোপালের মিষ্টি
কয়া গ্রামের কুলফি মালাই বিক্রেতা আসাদুল জানান, বছরের প্রায় ছয়মাস কুলফির চাহিদা থাকে। সকালে তারা কুলফি মালাই প্রস্তুত করে পর্যটন এলাকা শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী, লালনের মাজারসহ কুষ্টিয়া শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েন। গরম যত বাড়ে কুলফির বিক্রিও তত বেশি হয়। তবে বর্তমানে চিনি, দুধসহ মালাই তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বেশি লাভ করতে পারছেন না।
শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীতে বেড়াতে আসা রাবি শিক্ষার্থী মিফতাউল হাসনাইন বলেন, ‘এতদিন কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি মালাইয়ের নামডাক শুনে এসেছি। আজ খাওয়ার সৌভাগ্য হলো। সত্যিই স্বাদে অতুলনীয় কুষ্টিয়ার কুলফি মালাই।’
কয়া ও শিলাইদহ গ্রামের অনেক কারিগর এখন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কুলফি মালাই তৈরি করছেন। আবার আইস প্যাকে করে দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ৩৩ বছর ধরে এক টাকায় চা বিক্রি করছেন মহির উদ্দিন
কুমারখালীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, কুষ্টিয়াসহ সারাদেশেই কুলফি মালাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে কুলফি মালাই তৈরির উপকরণগুলোর দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কুলফি মালাই তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত সরকারিভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, কুষ্টিয়ার নামের সঙ্গে কুলফি মালাই জড়িয়ে আছে। কুষ্টিয়ার ব্র্যান্ডিং সুস্বাদু এ খাদ্যকে বাচিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এএমএস
এসআর/এমএস