ফেনী-পরশুরাম সড়কে যানচলাচল বন্ধ, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২৩

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফেনীর সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এই দুই উপজেলার ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কে কোমর পানি থাকায় ফেনীর সঙ্গে পরশুরামের যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যায় গ্রামীণ সড়ক, মৎস্য ও কৃষিখাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশকিছু জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

Feni-1.jpg

এদিকে, বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানিতে তলিয়ে আছে। বাঁধভাঙা পানিতে তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো।

কৃষি বিভাগ জানায়, সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া জেলায় ১০ হেক্টর আমন বীজতলা এবং ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।

পরশুরামের মৎস্যচাষি আকবর হোসেন বলেন, আমার তিনটি পুকুরে অন্তত ১০ লাখ টাকার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে। কীভাবে দোকানিদের খাদ্যের টাকা পরিশোধ করবো জানি না। চোখে অন্ধকার দেখছি।

Feni-1.jpg

ফুলগাজীর কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, জুলাইয়ের শেষদিকে সেচ দিয়ে দুই একর জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আজকালের মধ্যে পানি না সরলে রোপা আমন গাছ পচে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

বুধবার সকালে পরশুরামের উত্তর ধনিকুন্ডা থেকে ফুলগাজীর আনন্দপুর যাচ্ছেন বৃদ্ধা জোহরা বেগম। মূল সড়কে পানি উঠে গাড়ি চলাচল না করায় তিনি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পানিতে হেঁটেছেন। কোমর পর্যন্ত ভেজা কাপড়ে তিনি সারাদিন কীভাবে থাকবেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ফেনী সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহফুজ উল্লাহ বললো, পরীক্ষার আর মাত্র সাতদিন বাকি। চারিদিকে থইথই পানি। আগামীকাল (১০ আগস্ট) কলেজে অ্যাডমিট কার্ড দেবে। পানি ভেঙে কীভাবে কার্ড সংগ্রহ করবো বুঝতে পারছি না।

সে আরও বলে, ঘরে পানি, সড়কে পানি। পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৭ আগস্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

Feni-1.jpg

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া ও পরশুরামের ইউএনও সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, দুই উপজেলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। ১০ হেক্টর আমনের বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেতও পানিতে নিমজ্জিত। সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৩৭৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, প্রতিবছর বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এ এলাকার মানুষ বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য মুহুরী নদী খনন ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ চায়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, উজানে বৃষ্টি হওয়ায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে এদিকেও প্লাবন বন্ধ হয়ে যাবে। পানির অতি গতির কারণে বাঁধগুলোতে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।