পরকীয়া প্রেম, অচেতন করে স্বামীকে খুনিদের হাতে তুলে দেন স্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ১১:৩৯ এএম, ০৯ আগস্ট ২০২৩

নোয়াখালীর সেনবাগে ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিনকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়ার জেরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে তাকে খুনিদের হাতে তুলে দেন স্ত্রী রজ্জবের নেছা রিনা (৩৬)।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইনের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ স্বীকারোক্তি দেন আসামি রজ্জবের নেছা রিনা।

বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে নোয়াখালী আদালতের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, সোমবার ভোরে সেনবাগ উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামের ফকির বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. মাঈন উদ্দিনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরিবার ভিন্ন তথ্য দিলেও সন্দেহমূলকভাবে তার স্ত্রী রজ্জবের নেছাকে আটক করে পুলিশ।

তিন সন্তানের জননী রজ্জবের নেছা স্বীকার করেন, স্বামী মাঈন উদ্দিন ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম থাকার সুযোগে তার সাবেক অংশীদার স্থানীয় মাসুদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী রিনা। তাদের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন উপায়ে বাধা দেন মাঈন উদ্দিন। এ নিয়ে সংসারে কলহ তৈরি হয়।

তিন-চারদিন আগে মাঈন উদ্দিন বাড়িতে এলে প্রেমিক মাসুদকে নিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী রজ্জবের নেছা। পরিকল্পনা অনুযায়ী রজ্জবের নেছাকে ২০টি ঘুমের ওষুধ কিনে দেন মাসুদ। রোববার রাত ৯টার দিকে মাঈন উদ্দিনকে একগ্লাস দুধের সঙ্গে ১৪টি ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান রজ্জবের নেছা। পরে গভীর রাতে প্রেমিক মাসুদ ও তার সহযোগীদের হাতে অচেতন স্বামীকে তুলে দেন স্ত্রী। ঘাতকরা মাঈন উদ্দিনকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যায়। রাত ৩টার দিকে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

সোমবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে মাঈন উদ্দিনের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে পরিবার ও এলাকাবাসী।

পরকীয়া প্রেমিক মো. মাসুদ সেনবাগের ডুমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামের মৃত শরীফ মুন্সীর ছেলে। তিনি এক সময় নিহত মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে যৌথভাবে ঘের পরিচালনা ও মৎস্য চাষ করতেন। সেই সুবাদে মাঈন উদ্দিনের স্ত্রী রজ্জবের নেছার সঙ্গে তিনি পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মা রাহেলা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত স্ত্রী রজ্জবের নেছা রিনাকে আটক করে। তাকে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে স্বামীকে হত্যার ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন। পরে আদালতে পাঠালে সেখানেও স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন রজ্জবের নেছা। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী রজ্জবের নেছা প্রেমিক মাসুদকে নিয়ে ভুক্তভোগী মাঈন উদ্দিনকে হত্যা করলেও পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। কিন্তু রজ্জবের নেছার অসংলগ্ন কথাবার্তায় তাকে আইনের আওতায় আনা হয়। পরে তিনি হত্যার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।