পানির অভাবে কমছে পাটচাষ

ইমরান হাসান রাব্বী ইমরান হাসান রাব্বী , শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:০৬ এএম, ০৯ আগস্ট ২০২৩

কয়েক বছর ধরে শেরপুরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি সংকটে পাট পচাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এতে সোনালি এ ফসল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। লোকসানের শঙ্কায় ধীরে ধীরে কমছে পাটচাষির সংখ্যা। প্রতি বছরই কমছে পাট আবাদ। দুই বছরের ব্যবধানে আটশো একর জমিতে কমেছে পাট আবাদ। সমস্যা সমাধানে চাষিদের আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টিপাত শুরু হলে চাষিরা পাট কাটা শুরু করেন। এরই মধ্যে কোনো কোনো চাষি কিছু পাট জাগও দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ কৃষকই আশপাশে পানি না পেয়ে পাট কেটে জমির মধ্যেই রেখে দিয়েছেন। জমি প্রস্তুত না করতে পেরে অনেকে আমন রোপণও করতে পারছেন না। এতে দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক

জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক চাষি বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। আবার অনেকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিয়ে জাগ দিচ্ছেন। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। অতিরিক্ত খরচের কারণে ভালো ফলন হলেও লোকসানের আশংকা করছেন পাটচাষিরা।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খরিপ-১/ ২০২২-২৩ অর্থবছরের পাট আবাদের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশি জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৫ হেক্টর জমি, সেখানে রোপণ হয়েছে ৪৬৫ হেক্টর জমিতে। তোষা জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৮৫ হেক্টর, রোপণ হয়েছে ১৩১০ হেক্টরে। মেস্তা জাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৮০ হেক্টর এবং কেনাফ জাতের পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৫ হেক্টরে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২০০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর।

আরও পড়ুন: বর্ষায় বৃষ্টি নেই, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

এদিকে খরিপ-১ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট আবাদের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশি জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭০ হেক্টর, সেখানে রোপণ সম্ভব হয়েছে ৩৮৫ হেক্টর। তোষা জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩১৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৩৮৭ হেক্টর। মেস্তা জাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬২ হেক্টর এবং কেনাফ জাতের পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৪ হেক্টরে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯২০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ১৮৭৮ হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুই বছরের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ৭০০ একর এবং অর্জন কমেছে ৫৫ একর। একই পরিসংখ্যানে গত দুই বছরের ব্যবধানে জেলায় পাট আবাদ কমেছে প্রায় এক হাজার একর জমিতে।

পাটচাষি মোতালেব মিয়া বলেন, আমি চার বছর ধরে পাটের আবাদ করি। দুই বছর ধরে পাট জাগ দিতে হয় আরেক গ্রামে নিয়ে। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমার এলাকার অনেকেই আর পাটচাষ করছে না।

আরও পড়ুন: মলিন সোনালি আঁশের স্বপ্ন, আকাশপানে তাকিয়ে পাটচাষিরা

আরেক চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, পাটচাষের উৎপাদন খরচের তুলনায় এখন বাজারদর কমে যাচ্ছে। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, সময়মতো পাট কেটে পচানোর জন্য জাগ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকার যদি পাটের প্রতি নজর না দেয়, তাহলে ধীরে ধীরে পাটচাষি কমে যাবে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্য এবং বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার প্রতিবন্ধকতার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। আমরা কৃষকদের বিকল্প ব্যবস্থায় পাট পচানোর বিষয়ে সচেতন করছি। আশা করছি পাট চাষের অনাগ্রহের বিষয়টি দূর করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: পাটক্ষেতে পোকার আক্রমণ, কীটনাশকেও মিলছে না প্রতিকার

এছাড়া কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা পাট পচাতে আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক পানির উৎসের ভরসায় থাকতে হবে না। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ও বাঁচবে।

শেরপুরের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাটচাষ শেরপুরে বেড়েছে। তবে বর্ষা কম হওয়ায় পাট জাগ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গতানুগতিক পাট জাগ দেওয়ার বাইরেও আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। আশা করছি, এই পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকরা উপকৃত হবেন।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।