‘পানি না সরলে ধানের চারা পচে সর্বনাশ হয়ে যাবে’
ফেনীতে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে৷ এছাড়া ১০ হেক্টর আমন বীজ তলা ও ১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে৷ বাঁধভাঙা পানিতে অন্তত তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সোমবার মধ্যরাত থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আবারও মুহুরীর নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে পাওয়া তথ্যমতে মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের মোট ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
পরশুরামের মৎস্য চাষি আকবর হোসেন বলেন, চাষের তিনটি পুকুরে অন্তত ১০ লাখ টাকার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে। কীভাবে খাদ্যের ডিলারদের টাকা পরিশোধ করবো জানি না। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি৷
ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধভাঙা পানিতে অন্তত তিন শতাধিক পুকুর থেকে মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য চাষিদের অবকাঠামো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলগাজীর কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে সেচ দিয়ে দুই একর জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলাম৷ কিন্তু গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ আজকালের মধ্যে পানি না সরলে ধানের চারা পচে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে আছে৷
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।
ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে প্লাবনও বন্ধ হয়ে যাবে। পানির অতি গতির কারণে বাঁধগুলোতে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে ফুলগাজীতে বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায় পাশে দাঁড়িয়েছেন ফেনী পুলিশ সুপার জাকির হাসান৷ আজ বিকেলে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, দান কিংবা ত্রাণ নয়, মানবিক দিক বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে পুলিশ৷
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এএসএম