অভাবের কারণে অসুস্থ স্বামীকে নদীর পাড়ে রেখে গেলেন স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২৩

অভাব আর অসুস্থতার কারণে পাঁচদিন আগে বগুড়ার আদমদীঘির চাঁপাপুর ইউনিয়নের আড়াইল গ্রামের মাঠ সংলগ্ন নাগর নদীর পাড়ে স্বামী চাঁনমিয়াকে রেখে যান স্ত্রী মিতা বেগম। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের পাওগাছা তালপুকুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের ছেলে চাঁন মিয়া (৪০)। চাঁন পেশায় একজন চাতাল শ্রমিক ছিলেন। বছর দশেক আগে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাহালুতে মিতা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে আট বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

প্রথমদিকে চাঁন মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে একত্রে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে তার (চাঁন মিয়ার) মা আসমা বেগম মারা যাওয়ার কারণে বাবা আব্দুল জব্বার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ঘরে সৎ মা আসায় বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এরপর জীবিকার তাগিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিভিন্ন এলাকার চাতাল মিলে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ গত এক বছর যাবৎ শাজাহানপুর উপজেলার রাণীরহাটে একটি ভাড়া বাসায় ছিলেন।

বেশ কিছুদিন থেকে চান মিয়া নানা জটিল রোগে ভুগতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কর্মক্ষম হয়ে পড়ায় সংসারে অভাবও বাড়তে থাকে। ধার দেনা করে স্ত্রী মিতা বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করিয়েছেন। অবশেষে তিনি অভাবের কারণে চিকিৎসা করাতে না পেরে স্বামীকে নাগর নদীর তীরে রেখে আসার সীদ্ধান্ত নেন।

সেই সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) স্বামী চাঁন মিয়াকে আদমদীঘির নাগর নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে ত্রিপল দিয়ে ঘর বানিয়ে কিছু শুকনা খাবার ও খাবারের জন্য পানি দিয়ে চলে আসেন। এরপর তিনি (মিতা) জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান।

চাঁন মিয়ার স্ত্রী মিতা বেগম জানান, তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়ে গেছি। চিকিৎসা বন্ধ করায় ‘বারজারস নামক’ রোগের কারণে তার কাছে গেলেও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এজন্য কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে তার নানির বাড়ি কাহালুতে রেখে অর্থ উপার্জনের জন্য বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে আসি।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মানবিক কারণে অসহায় চাঁন মিয়াকে নাগর নদের আদমদীঘি অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের পর জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।