মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা
সেই খৈয়াছড়া ক্রসিংয়ে ল্যান্ডফোন বিকল, কলিং বেলও নষ্ট

২৯ জুলাই। একবছর আগে এই দিনে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ট্রেন ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ পর্যটক প্রাণ হারান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুজন।
ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেফতার হন গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন। মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। গঠন করা হয় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি। দুর্ঘটনার পর কিছুদিন ধরে বিভিন্ন লেভেল ক্রসিং নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও দেখা যায়। তবে এক বছর না যেতে সেই তৎপরতা থেমে গেছে। ফের আগের চিত্র দেখা গেছে খৈয়াছড়া লেভেল ক্রসিংয়ে।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ১১
সরেজমিনে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে দেখা যায়, লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনজন গেটকিপার। ৮ ঘণ্টা করে দায়িত্বে থাকেন তারা। এরা হলেন সাগর দাস, রিপন চন্দ্র দাস ও মেহরাজ হোসাইন।
গেটকিপার সাগর দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্রেন আসার সিগন্যাল পেয়ে অনেক সময় গেটবার ফেলার পরও অনেকে গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনার পরও শিক্ষা হয়নি মানুষের। বিশেষ করে বাইকে করে আসা পর্যটকরা বেশ উচ্ছৃঙ্খল।’
তিনি আরও বলেন, ‘লেভেল ক্রসিংয়ে থাকা ল্যান্ডফোন বিকল রয়েছে অনেকদিন ধরে। কলিং বেলও নষ্ট। এগুলো কখন ঠিক হবে বলতে পারছি না।’
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা: গেটকিপার সাদ্দাম কারাগারে
আরেক গেটকিপার মেহরাজ হোসাইন বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ট্রেন যাওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। আমরা নিষেধ করলে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়।’
পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চোখের সামনে সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারিনি। দৃশ্যপট মনে উঠলে বুকটা কেমন জানি করে। মুহূর্তের মধ্যে এতগুলো তাজা মানুষ লাশ হয়ে গেলো!’
তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ ওই ঘটনার পরও পর্যটকদের শিক্ষা হয়নি। গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে রেললাইন অতিক্রম করেন। গেটকিপার গেটবার ফেলার পরও অনেক মোটরসাইকেল আরোহী জোর করে চলে যেতে চান।’
আরও পড়ুন: দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত, দায় আছে নাগরিকেরও
এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শামছুদ্দোহা বলেন, আসলে ওই এলাকাটি আমার এরিয়ার বাইরে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করবো।
এসময় তিনি দাবি করেন, ওই দুর্ঘটনার পর থেকে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।
সীতাকুণ্ড রেওলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খোরশেদ আলম বলেন, গেটকিপার সাদ্দামের অবহেলায় ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এসআর/এএসএম