সুনামগঞ্জ শহর যেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরী
সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যকে পুঁজি করে সুনামগঞ্জে দিন দিন বেড়েই চলেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পৌরশহর যেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নয়, বাণিজ্যই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় ছুটছেন শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কিন্তু সেখানে গেলে প্রথমেই তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এমনকি টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট দ্রুত দেখানোর তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে ২৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সিলেট ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেডিসিন, কিডনি, অর্থোপেডিক্সসহ সব ধরনের প্রায় শতাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শহরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় রোগীরাও ভিড় করেন সেখানে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে রোগী দেখা। ফলে সপ্তাহের এই দু’দিনেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় কোটি টাকার মতো শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষাই হয়। এমনকি ডাক্তারের আগমন উপলক্ষে পুরো জেলায় করা হয় মাইকিং। সপ্তাহে দুই দিন যেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের হাট বসে।
স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এক সপ্তাহে কোটি টাকার মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। গ্রামের অসহায় মানুষকে অহেতুক পরীক্ষা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। এটা সত্যিই দুঃখজনক।
এদিকে পৌর শহরের উকিল পাড়ায় নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দালাল চক্র গ্রামের অসহায় মানুষকে বুঝিয়ে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসছে। সেখানেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেই একই চিত্র।
কথা হয় তাহিরপুর থেকে আসা রাহিমা খাতুন নামে এক রোগীর সঙ্গে। তিনি জানান, ভালো ডাক্তার দেখানোর আশায় সুনামগঞ্জে এসেছিলাম। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই রিকশাচালক যখন দেখলো আমি অসুস্থ, তখন সে আমাকে আর আমার স্বামীকে বুঝিয়ে নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে। সেখানে এসে অনেক টাকার বিভিন্ন ধরনের শুধু টেস্ট করিয়েছি। কিন্তু এখনো আমার অসুখ কমেনি।
রহিমার এমন অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কিবরিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি বাসায় চলে এসেছি। নিয়াময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে কিছু লিখতে হবে না। সেন্টারে গিয়ে আমার কথা বলে টাকা নিয়ে যাও। এমনকি শহরের বড় বড় সাংবাদিকরা আমার বন্ধু।’
এসব বিষয়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রেসক্রিপশনে অহেতুক স্বাস্থ্য পরীক্ষা লিখে দিয়ে যদি কোনো ডাক্তার বাড়তি টাকা আয় করে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আর বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক আছে ১০টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৯টি। এই সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও নজরদারি বাড়াবে সেই প্রত্যাশা সুনামগঞ্জবাসীর।
এফএ/এএসএম