মিরসরাই

ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন, বিপাকে খামারিরা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ০৪ আগস্ট ২০২৩

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগে আক্রান্ত গরু বেড়েই চলছে। এ রোগের সঠিক কোনো ভ্যাকসিন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় প্রায় ১৫ হাজার গরু রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত। অনেক খামারি গরু নিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। উপজেলার করেরহাট এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যেসব গরু আসছে এদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত গরু রয়েছে। অনেক গরুর মালিক প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন। রোগটি ছড়ানোর পর ভ্যাকসিন না থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, নিয়মিত গরুর গোবর পরিষ্কার না করা ও মেঝে স্যাঁতসেঁতে থাকার কারণে সেখানে মশার মতো ছোট ছোট পোকা জন্ম নেয়। ওই পোকাগুলো গরুর শরীরে যেখানে কামড় দেয় সেখানে ফুলে চাকা চাকা হয়ে যায়। যা লাম্পি স্কিন রোগ নামে পরিচিত। অনেক সময় তা ফেটে রক্ত বের হয়, আবার চামড়াও ফুটো হয়ে যায়। এ পোকাগুলো লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুকে কামড় দিয়ে অন্য কোনো গরুকে কামড় দিলে তাদের মধ্যেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

jagonews24

আরও পড়ুন: গরুর লাম্পি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় 

উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ এআই টেকনিশিয়ান বেলায়েত হোসেন বলেন, করেরহাট ইউনিয়নে অনেক গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় কিছু গরু সুস্থ হলেও নতুনভাবে আরও আক্রান্ত হচ্ছে। আমি যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।

উপজেলার জামালপুর এলাকার গরুর মালিক মো. সবুজ বলেন, লাভের আশায় একটি ষাঁড় পালন করেছি। লাম্পি স্ক্রিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক টাকা খরচ করেছি। এখনো সুস্থ হয়নি, কখন সুস্থ হবে বলতে পারছিনা।

মিরসরাই পৌরসভার কালা মিয়ার দোকান এলাকার গরুর মালিক মিয়াধন সওদাগর বলেন, আমার একটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

আনোয়ার এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার খামারে দুটি গরু মারা গেছে। আরও একটি গরু অসুস্থ হয়ে রয়েছে। এতো কোরবানে খামারের ৮০ ভাগ গরু বিক্রি করতে পারিনি। তার উপর গরু মারা যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: গো-খাদ্যের পর খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো লাম্পি স্কিন 

মঘাদিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ এআই টেকনিশিয়ান ইমাম হোসেন বলেন, অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। উপজেলার নয়দুয়ারিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

jagonews24

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, লাম্পি স্কিন একটি মহামারী রোগ। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ না থাকায় টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবু আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, খামার পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে এ রোগ ছড়ায় কম। লাম্পি স্ক্রিন রোগ নিরাময়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা।

আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।