বর্ষায় বৃষ্টি নেই, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক
নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষক সোলাইমান আলী। নিজের ৩৫ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন। পরিপক্ক হওয়ার পর কেটেও ফেলেছেন পাট। তবে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
একই অবস্থা জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রামের কৃষক ধীজেন্দ নাথের। খাল-বিলে পানি না থাকায় ২১ শতাংশ জমির পাট কেটে রেখেছেন স্তূপ করে। ভরা মৌসুমে পানির অভাবে পাটের পর আমন ধান নিয়েও চিন্তিত তিনি।
শুধু সোলেইমান আলী ও ধীজেন্দ্র নাথ নয়; একই অবস্থা এ অঞ্চলের শতাধিক কৃষকের। দিন-পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টির অভাবে খাল-বিলে পানি নেই। আমন ধান রোপণের সময় কাছে আসায় বাধ্য হয়ে পাট কাটতে হচ্ছে কৃষককে। তবে পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি নেই। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষক সোলাইমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আরও আগে পাট কাটির লাগত (কাটা লাগতো)। আকাশের পানি নাই। আশপাশের দিঘিগুলাতও পানি নাই। এখন পালা করি থুচি (স্তূপ করে রাখা হয়েছে)। কী আর করমু? পানি না হলে পাটাতো পচের পামো না (পাট পটাতে পারবো না)। কালা কালা দাগ হইবে, দাম কম পামো।’
ধীজেন্দ্র নাথ বলেন, ‘ব্যাইশার দিনোত (বর্ষার দিনেও) পানি নাই। এমন করি কি আবাদ করা যায়? এমনি হামা বেচের গেইলে (আমরা বেচতে গেলে) জিনিসপাতির দাম নাই। তার উপর এত যন্ত্রণা।’
বালাগ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘যে অবস্থা তাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক কম। এবার আমাদের সবধরনের আবাদ পানির জন্য খারাপ হবে। কৃষি অফিসাররা নানা পদ্ধতি দিচ্ছে। তবে বাব-দাদার আমল থেকে যে পদ্ধতিতে চাষ করছি সেটাতেই আমরা অভ্যস্ত। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জুলাই মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় গড়ে ৪০০- ৫২৬ মিলিমিটার। অথচ চলতি মাসে রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে ২৬০.৫ মিলিমিটার। এ সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৬-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। অতচ গত একমাসে নীলফামারীতে দিনে ২৬-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুসারে, জেলায় এবার ৬ হাজার ৬১১ হেক্ট্রর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ পাঠ কাটা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ এখনো কাটার অপেক্ষায়। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে অনেক কৃষক পাট না কেটে অপেক্ষা করছেন।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ পাট কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। বাকি ২০ শতাংশ মাঠেই আছে। কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে আমরা রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
জেলার ডিমলা কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণত জুলাই মাসে ৫২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীতে গড়ে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর বিভাগের হিসেব করলে এর পরিমাণ নেমে আসবে ২০০ মিলিমিটারের ঘরে। জুনের তুলনায় একটু কম হয়েছে বৃষ্টিপাত।
তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা অনেক বেশি, তাই এখন বর্ষা মৌসুম চললেও তেমন বৃষ্টি নেই। জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। ফলে দিন-পঞ্জিকা অনুযায়ী ঋতু মিলছে না।
রাজু আহম্মেদ/এসআর/এএসএম