শিউলির মতো কি থেমে যাবে সিমু
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দুর্গম চরের নানা প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে এসএসসি পাস করেছে সিমু আক্তার। জিপিএ-৪.৩২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তার বোন শিউলি আক্তারও এসএসসি পাস করেছিল কিন্তু বেশিদূর পড়া হয়নি তার। এসএসসি পাসের পরই তাকে সংসার বাঁধতে হয়েছে। তবে সিমুর স্বপ্ন, সে একজন ভালো শিক্ষক হবে।
সিমু রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের দুর্গম কানিবগার চরের বয়ারঘাট এলাকার মাঝি মজিবুল সিকদারের মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সে মেজ।
সিমু লক্ষ্মীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং বিভাগ (ভোকেশনাল) থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে।
আরও পড়ুন: ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন রহিমা
সিমুর বাবা মজিবুল সিকদার ও মা সুরাইয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দুজনই নিরক্ষর। তবে মেয়েদের নিরক্ষর রাখতে চাননি। তাই তিন মেয়েকেই স্কুলে পাঠিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কানিবগার চরে অন্যের জমিতে সিমুদের বসবাস। দুটি খড়ের গাদা আর কলাগাছ তাদের ঝুপড়ি ঘরটি আড়াল করে রেখেছে।
সিমুর পরিবার জানায়, পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে বাড়ি থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে হয়েছে সুমিকে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে তাকে প্রতিদিন পাড়ি দিতে হয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ। পরে এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় সুমি ও তার ছোট বোন পপি আক্তার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের দুর্গমতা আটকাতে পারেনি নয়নকে, এসএসসিতে পেলো জিপিএ ৫
সিমুর বাবা মজিবুল সিকদার বলেন, জীবন সংগ্রামে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পড়ালেখায় মেয়েদের বাধা দেননি। তবে তার আক্ষেপ একটাই—বিশাল চরের বুকে বসবাস করলেও তার নিজের এক খণ্ড জমি নেই। চরে যদি একটু জমি হতো, তাহলে বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারতেন।
লক্ষ্মীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক এমদাদ হোসেন বলেন, সিমু ও তার বোন আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তবে তাদের সংগ্রামের বিষয়টি জানা ছিল না। সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করা হবে।
কাজল কায়েস/এসআর/এএসএম