পাহাড়ের দুর্গমতা আটকাতে পারেনি নয়নকে, এসএসসিতে পেলো জিপিএ ৫
সারাদেশের মতো শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম বোর্ডের এসএসসি ফলাফল। আর ফলাফলে দারুণ সাফল্য পেয়েছে রাঙ্গামাটির দুর্গম উপজেলা বিলাইছড়ির ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা। দুর্গম পাহাড়ের সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নয়ন অর্জন করেছে জিপিএ ৫।
জানা গেছে, বিলাইছড়ি উপজেলার একটি দুর্গম এলাকা হলো ৩ নম্বর ফারুয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে ভরা মৌসুমে নৌপথে সদর উপজেলা থেকে কাপ্তাই লেক ও রাইংক্ষ্যং খাল ধরে প্রায় ৭০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা। শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি শুকিয়ে গেলে এখানে পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।
বিলাইছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছে নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা নামের এক শিক্ষার্থী। তার এই অর্জনে পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, নয়ন জুম চাষি পূর্ণিমা মুনি তঞ্চঙ্গ্যা ও আসন বালা তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। ফারুয়া ইউনিয়নের তাংকুইতাং গ্রামে তাদের পৈত্রিক বাড়ি। ফারুয়া স্কুল থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন সে পায়ে হেঁটে উঁচু নিচু পাহাড় পাড় হয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে স্কুলে আসা যাওয়া করতো।
আরও পড়ুন: স্কুলের শিক্ষার্থী ৩, পাস করেনি কেউ
তিনি জানান, আমাদের পরীক্ষার কেন্দ্র বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এত দূর থেকে কষ্ট করে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো রেজাল্ট করা খুবই কঠিন। আমাদের বিদ্যালয়ে যেসমস্ত শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে সবাই দুর্গম এলাকার। অনেক শিক্ষার্থী আছে স্কুল থেকে যাদের বাড়ির দূরত্ব দুই থেকে তিনদিন হাঁটার পথ। যদি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের মাধ্যমে আবাসিক বিদ্যালয় করা হয় তাহলে ফারুয়ার শিক্ষার হার আরও বেগবান হবে। একই সঙ্গে এখানকার আত্মসামাজিক প্রেক্ষাপটের আমূল পরিবর্তন হবে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এ অঞ্চলে এসএসসি কেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের চরম দুরবস্থার শিকার হতে হচ্ছে। কারণ স্কুল থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। তাই শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে এসএসসি কেন্দ্র এবং আবাসিক বিদ্যালয় করা খুবই জরুরি। আর আমার বিদ্যালয়ের রেজাল্ট খুবই ভালো, প্রতিবছর জেএসসি এবং এসএসসিতে উপজেলায় আমার স্কুল সব সময় প্রথম হয়।
জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নয়ন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা দুই বোন এক ভাই। আমি সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বাবা-মা জুম চাষি। প্রতিদিন আমি আড়াই ঘণ্টা হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করি। ছুটির দিন জুম চাষে বাবা মাকে সাহায্য করি। আর্থিক অনটনে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও ক্লাসে স্কুলের শিক্ষকদের পাঠদান আমাকে এই ফলাফল অর্জনে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীর চেয়ে আসন বেশি সাড়ে ৮ লাখ, নজর ভালো কলেজে
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের অতি দুর্গম তাংকুইতাং পাড়া থেকে নয়ন মনি তঞ্চঙ্গ্যা জিপিএ ৫ পেয়েছে শুনে অনেক ভালো লাগছে। ফারুয়াতে এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পৌঁছেনি। এখনো সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় জিপিএ ৫ পাওয়াকে আমরা প্রতিভার বিস্ফোরণ নামে আখ্যায়িত করতে পারি। এমন প্রতিভাবানদের সাফল্য কামনা করি।
সাইফুল উদ্দীন/জেএস/এমএস