পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক

রুবেলুর রহমান
রুবেলুর রহমান রুবেলুর রহমান , জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩

রাজবাড়ীর প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে পাট অন্যতম। জেলায় এবার পাটের ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে জাগ (পচানো) দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। মাঠের আশপাশে খাল-বিল না থাকায় পাট কাটার পর অতিরিক্ত টাকা খরচ করে অন্যত্র নিয়ে জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন চাষিরা। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ।

এ অবস্থায় খাল-বিল পুনরুদ্ধার করা গেলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না বলে দাবি কৃষকদের। অন্যথায় প্রতিবছর তাদের পাট চাষে লোকসান গুনতে হবে।

সোনালী আঁশ খ্যাত এই পাট রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায় কম বেশি আবাদ হয়ে থাকে। দিন দিন খাল-বিল ও পুকুরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বর্তমানে চাষিরা পাট কেটে জাগ দেওয়া ও ধোয়া শুরু করেছেন। কিন্তু খাল-বিল ও পুকুরের অভাবে কেউ কেউ একই খালে গাদাগাদি করে পচা ও নষ্ট পানির মধ্যেই জাগ দিচ্ছেন। ফলে পাটের রঙ খারাপ হচ্ছে। আবার অনেকেই উপায়ান্তর না পেয়ে পুকুরেই পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে হুমকিতে পড়ছে পুকুরের মাছ। উন্মুক্ত বিলের পানিতে পাট পচাতে পারলে পাটের রঙ ভালো হয়।

এদিকে জেলায় এবার এক বিঘা জমিতে পাট আবাদে কৃষকদের সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর বিঘায় এবার ৮ থেকে ১০ মণ ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সবই প্রায় তোষা জাতের পাট। ফলনও ভালো হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাট কেটে পানির অভাবে কেউ ক্ষেতে, আবার কেউ রাস্তার পাশে নিয়ে রেখেছেন। কেউ আবার ভ্যান বা অন্যান্য বাহনে করে দূরে নিয়ে জাগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে ছোট খালে গাদাগাদি করে নষ্ট পানিতেই জাগ দিয়েছেন।

পাটচাষি আমির শেখ, আব্দুল করিম শেখ, সায়েদ আলী শেখ ও ইয়াছিন বলেন, বর্তমানে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় পাটচাষে তাদের খরচও বেড়ে গেছে। পাট ধুয়ে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হয় অনেক সময় সেই টাকাও ওঠে না। তারা এখন পাট ঠিকই কাটছেন, কিন্তু পানির অভাবে বাড়তি টাকা খরচ করে দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। যার কারণে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া একই স্থানে অনেক পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রঙ খারাপ হচ্ছে।

আগে মাঠের পাশে খাল-বিল ছিল, এখন সেসব না থাকায় তারা সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘদিন খাল খনন না করা ও চারাপাশে বাঁধ দিয়ে পুকুর করে মাছচাষ করাসহ নানা কারণে খাল-বিল কমে গেছে। যেটুকু আছে তারও মুখ বন্ধ থাকায় পানি হয় না। এসব খাল-বিল খনন ও পুনরুদ্ধার করা গেলে কৃষকদের জন্য যেমন উপকার হবে তেমনি পরিবেশের জন্যও ভালো হবে বলে জানান কৃষকরা।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার অতিরিক্ত খরা কাটিয়ে জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলনও হবে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেও কৃষকদের পাট পচাতে সমস্যা হবে না। তারপরও পাট পচানো সমস্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য বিভাগ ও পুকুর মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পাট পচানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।