পিরোজপুর
কমে গেছে আইভি স্যালাইনের মজুত, সংকটের আশঙ্কা
পিরোজপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৮ জন। বর্তমানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়নি। ভবন সংকটের কারণে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলার হাসপাতালগুলোতে আইভি স্যালাইনের মজুত কমে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আইভি স্যালাইন সরবরাহ না করা হলে এক সপ্তাহর মধ্যে স্যালাইন সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু হয়েছে কি-না বুঝবেন যেসব লক্ষণে
পিরোজপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলায় সোমবার (২৪ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সোমবার (২৪ জুলাই) জেলার হাসপাতালগুলোতে ৯৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে নেছারাবাদ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৪০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এছাড়া পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ১৩, ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১, মঠবাড়িয়ায় ১৬, নাজিরপুরে ১৩ জন ও কাউখালীতে একজন রয়েছেন। তবে ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেউ ভর্তি নেই।
নেছারাবাদ উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে অসংখ্য নার্সারি রয়েছে। নার্সারিগুলোর টবে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করায় এ এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি।
আরও পড়ুন: জ্বর হওয়ার কতদিনের মধ্যে কোন টেস্ট করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে?
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর সদর হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। মশারি টানিয়ে রাখা হলেও অনেক রোগী মশারির মধ্যে থেকে বের হয়ে ঘোরাফেরা করছেন।
সদর উপজেলার উদয়কাঠি গ্রামের সৈকত খান (২২) জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। গত শুক্রবার সেখান থেকে বাড়িতে ফেরার পর জ্বর , মাথাব্যথা ও বমি শুরু হয়। সোমবার পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি।’
ইন্দুরকানি উপজেলার ডেপসাবুনিয়া গ্রামের ফাইজুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সবজিক্ষেতে কাজ করার সময়ে মশার কামড় খাই। এতে শরীরে জ্বর চলে আসে। বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে জ্বরের সঙ্গে মাথা ও শরীরের ব্যথা বেড়ে যায়। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। বুধবার বিকেলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের পরামর্শে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে যেসব খাবার খাবেন
ফাইজুল ইসলামের পাশের শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সদর উপজেলার সাদ্দাম হোসেন (৩২)। তিনি বলেন, ১৭ দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছেন। এখন তিনি সুস্থ। বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকায় রোগীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি এডিস মশা এখন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
এ বিষয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন হাসানাত ইউসুফ জাকি বলেন, ভবন ও শয্যা সংকটের কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা যাচ্ছে না। তবে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানিয়ে সাধারণ ওয়ার্ডে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে আইভি স্যালাইন কমে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে স্যালাইন শেষ হয়ে যাবে। স্যালাইনের চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এসআর/এএসএম