ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

মাছ ধরতে নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৩

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে সরকারি নিষেধ অমান্য করে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে একটি শক্তিশালী চক্র। গ্রামের কাছ থেকে বালু তোলায় ভাঙন আতঙ্কে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা ফেরিঘাটের অদূরে সূতারপড়া গ্রামের সামনের ধনু নদীতে মাসের পর মাস চলছে বালু সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব। প্রতিদিন শত শত নৌকা বোঝাই করে নদী থেকে বালু তুলে পাচার করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে নদী ইজারা নিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল মাছ ধরার পাশাপাশি অন্তত ৫টি ড্রেজার দিয়ে দৈনিক শতাধিক নৌকা বালু উত্তোলন করছে। এতে ভাঙনের কবলে পড়েছে সূতারপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। ফসলি জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় গর্ত।

jagonews24

বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর নদী তীরের এসব জমিতে ফসল ফলান স্থানীয়রা। প্রভাবশালীরা বালু তোলার সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার। উল্টো তাদের হুমকি-ধমকির শিকার হতে হচ্ছে।

ধনু নদী ছাড়াও করিমগঞ্জসহ হাওরের বিভিন্ন নদ-নদী থেকে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র।

৬৫ বছরের বৃদ্ধ কৃষক মো. তহুর আলী বলেন, এই নদী ভাঙনের কারণে আমাদের গ্রাম দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের গ্রামে থাকা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। এই নদী থেকে বালু তোলার কারণে নদী বড় হচ্ছে আর গ্রাম ছোট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম, চেয়ারম্যান বলেছেন তার দ্বারা বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব না।

এলাকার মো. আরকান মিয়া জানান, যারা বালু উত্তোলন করেন তারা অনেক প্রভাবশালী। বাধা দিলে তারা হুমকি-ধমকি দেয়। গ্রামবাসী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও পারছি না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি আমাদের গ্রাম রক্ষার্থে এই বালু উত্তোলন যাতে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

jagonews24

ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনের কারণে গ্রামবাসী এখানে থাকার আর কোনো উপায় দেখছে না। নদীতে গ্রামটি বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। আর এই নদীভাঙনের মূল কারণ হচ্ছে বালু উত্তোলন। ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে গ্রামের সামনে থেকে নদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করছি এটা বন্ধ করার জন্য কিন্তু পারছি না। তাদেরকে অনুরোধ করে বলেছি তোমরা নদী ইজারা এনেছ মাছ ধরার জন্য, মাছ ধরো। নদী থেকে বালু উত্তোলন করো না।

তিনি বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন এবং এমপি মহোদয়ের কাছেও গেছি। এমপি মহোদয় ইউএনও এবং ওসি সাহেবকে ডেকে বলে দিয়েছেন। তারা বলেন বালু উত্তোলন আর হবে না। কিন্তু কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়। অভিযানের খবর শুনে তারা পালিয়ে যায়। অভিযান শেষ হলে আবার বালু উত্তোলন করে।

এ বিষয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার বসু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।