বিস্ময় বালক বোরহান
ইংরেজিতে লিখতে পারে সনেট, বের হয়েছে বই
২১ লাইনের ইংরেজি কবিতা। প্রতিটি লাইনে আবার ২১টি করে শব্দ। এ ধরনের কবিতা (সনেট) অনায়াসে লিখতে পারে ঝিনাইদহের ছেলে বোরহান। গত দুই বছরে এ ধরনের ৮৫টি কবিতা লিখেছে সে। বের হয়েছে বই। আরও একটি বই প্রকাশের পথে।
বিস্ময় বালক বোরহানের বাবা আব্দুস সালাম একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। মা নাছরিন সালাম গৃহিণী। ছোট ভাই এমএনএস রুহান ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
বোরহান তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কে আজাদ রেস্ট হাউজের পেছনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছে।
চতুর্দশপদী বা সনেট হলো এক ধরনের কবিতা যার প্রথম উদ্ভব হয় মধ্যযুগে ইতালিতে। এর বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ১৪ লাইনের হয়। আবার প্রত্যেক লাইনে ১৪টি করে অক্ষর থাকে।
সনেটের প্রবর্তক ইতালিয় কবি পেত্রার্ক। বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন মাইকেল মধূসুদন দত্ত। তবে বোরহানের লেখা সনেটের বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ২১ লাইনবিশিষ্ট। প্রতিটি লাইনে ২১টি করে শব্দ থাকে।
আরও পড়ুন: স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গেই বছরের পর বছর ঘুমান তারা
বোরহানের পুরো নাম এমএনএস বোরহান। ২০২৩ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর তার জন্ম।
এতটুকু বয়সে ২১ পদী ইংরেজি ভাষায় সনেট লিখে অবাক করে দিয়েছে বোরহান। ২১ পদী ইংরেজি ভাষায় সনেট বোরহানই প্রথম লিখেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইংরেজিতে লেখা ৬১টি কবিতা ও একটি সনেট নিয়ে ‘ট্রু ভ্যালেন্টাইন টু ইয়ে এভার’ শিরোনামে একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় বই মেলায় বইটি প্রকাশ করে প্রান্ত প্রকাশন।
একই বছর ৯-১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের কলকাতার মরহকুঞ্জে বাংলাদেশ বইমেলায় বোরহানের এ বইটি প্রদর্শিত হয়। তার আরও একটি বই নাইজেরিয়া থেকে খুব শিগগির প্রকাশিত হবে। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও দুই শতাধিক কবিতার পাণ্ডুলিপি লেখা রয়েছে বোরহানের।
আরও পড়ুন: আজব এক সেতু
বোরহানের লেখা সনেট ও কবিতার মূল বিষয়বস্তু ভালোবাসা এবং তা প্রকাশের নানা রকম আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ রয়েছে এতে।
শুধু তাই নয়, গণিতে জটিল বিষয়গুলো কীভাবে অল্প সময়ে এবং সহজে সমাধান করা যায় এমন নানা সূত্র তৈরি নিয়েও কাজ করছে বোরহান।
বোরহানের বাবা আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, কেউ ঘর থেকে বের হতে পারতো না; তখন আমার ছেলেকে দেখতাম মোবাইলে অনলাইনে লেখাপড়া করছে। এর একপর্যায়ে লক্ষ্য করি সে শেক্সপিয়ারের লেখা বই পড়াশোনা করতে শুরু করেছে। এর কিছুদিন পর কবিতা লেখা শুরু করে। তখন দেখি ওর কবিতাগুলো ২১ লাইনের এবং প্রতিটা লাইনে ২১ অক্ষর। ছেলে কবিতা লিখতে লিখতে অনেকগুলো কবিতা লিখে ফেলে। তখন আমি প্রান্ত প্রকাশনা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা কবিতাগুলো দেখে পছন্দ করে এবং একটি বই প্রকাশ করে। বইটি চলতি বছর ঢাকা বইমেলায় প্রকাশিত হয়।’
আরও পড়ুন: সৌন্দর্য কাছে টানে, ছোঁয়াতেই মৃত্যু
তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতার মরহকুঞ্জে বাংলাদেশ বইমেলায় বোরহানের বইটি প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়া একটি বই নাইজেরিয়া থেকে প্রকাশিত হবে। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’
মা নাছরিন সালাম বলেন, ‘করোনার মধ্যে বোরহানকে কখনো ভিডিও গেম খেলতে দেখিনি। সবসময় মোবাইলে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে দেখতাম। একদিন দুপুরে বোরহানের সঙ্গে রুমে বসে আছি। তখন হঠাৎ করে খাতা-কলম নিয়ে এসে আমাকে নিয়ে ইংরেজিতে একটি কবিতা লেখে। কবিতাটি দেখে আমি অবাক হই। পরে কবিতাটি ওর বাবাকে দেখাই। এরপর থেকে সে অনেকগুলো কবিতা লেখে। তার লেখা সবগুলো কবিতা অসাধারণ।’
কথা হয় বিস্ময় বালক বোরহানের সঙ্গে। সে জাগো নিউজকে বলে, ‘করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় বাইরে বের হতে পারতাম না। তাই তেমন কোনো কাজও ছিল না। সেজন্য অনলাইনে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তাম। এরমধ্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা পড়ার পর থেকে আমার লেখার আগ্রহ হয়।’
বোরহান আরও জানায়, বর্তমান সে উচ্চতর গণিতের বিভিন্ন সমাধান নিয়ে গবেষণা করছে। তার চেষ্টা, গণিতের বিভিন্ন জটিল সমাধান কীভাবে সহজে করা যায়।
আরও পড়ুন: ভিক্ষা করাই পেশা, মাসে আয় লাখ টাকা
রাজধানীর হাজী ইউনুস আলী কলেজের ইংরেজি প্রভাষক ইলিয়াস রাব্বি। তিনি বলেন, ‘ট্রু ভ্যালেন্টাইন টু ইয়ে এভার’ একেবারেই নতুন শৈলীর লেখা। প্রেম- ভালোবাসা তার লেখার কেন্দ্রীয় বিষয়। সে মানুষের জীবনের প্রতিটি কোণে ভালবাসার শক্তি আবিষ্কার করে। সত্যিকারের ভালোবাসা যে একজন মানুষকে নিখুুঁত করে তুলতে পারে তার লেখনীতে সেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
প্রভাষক ইলিয়াস রাব্বি আরও বলেন, ‘প্রেমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এ কিশোর কবি। সে মূলত শেক্সপিয়ার এবং সে সময়ের রোমান্টিক কবিদের অনুসরণ করে লেখার চেষ্টা করেছে। তার কবিতার ভাষা সব বয়সের বিশেষ করে তরুণ পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। বোরহান তার প্রতিভা দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে সমৃদ্ধি করবে বলে আশা রাখি।’
ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দশম শ্রেণির ছাত্র যে বইটি লিখেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। আমার বিশ্বাস তার এ লেখা সব মহলে প্রশংসিত হবে।
এসআর/জিকেএস