ঝকঝকে সেতুতে উঠতে লাগে মই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৩

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার হাজিরহাট এলাকার পাশাপাশি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সেতু এলাকাবাসীর গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ঝকঝকে রঙিন সেতু হলেও তা মই বেয়ে উঠতে হয়।

চলতি মাসের বন্যায় সংযোগ সড়কের দুইপাশের মাটি সরে গিয়ে সেতু দুটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুতে উঠছেন কাঠের মই দিয়ে। এভাবে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় তাদের দীর্ঘদিনের ‘স্বপ্নের সেতু’ কোনো কাজে আসছে না। দুটি সেতুর উভয় পাশেই সংযোগ সড়ক নেই। এ অভিযোগ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা প্রকৌশলীরা তা আমলে নেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতী গ্রামের হাজিরহাট এলাকার একটি খালে সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-দক্ষিণের সেতুটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় নেত্রকোনার এ টি এল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ পেয়ে ওই ঠিকাদার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে তা দিয়ে দেন।

lal

অপরদিকে, ওই খালের পূর্ব-পশ্চিম দিকের ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে অর্থায়ন করে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এটির কাজ পায় আদিতমারীর মো. ইব্রাহিম নামে একজন ঠিকাদার। সেটিও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে দিয়ে দেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘ত্রাণের ব্রিজ’ হিসেবে পরিচিত সেতুর পূর্বপাশে করা হয়নি সংযোগ সড়কের কাজ। সেখানে সামান্য যা মাটি ছিল তা বন্যায় ভেসে গিয়ে খাদে পরিণত হয়েছে। ফলে স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মই আকৃতির সিঁড়ি বানিয়ে অনেক কষ্ট করে সেই সেতুতে উঠছেন। তবে সেখান দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপারের সুযোগ নেই। সেতুর পশ্চিম প্রান্তের মাটিও কিছুটা সরে গেছে।

অপরদিকে, বিএডিসি নির্মিত সেতুরও প্রায় একই হাল। সেতুর দুইপাশের অনেক জায়গার মাটি সরে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে ওই এলাকার লোকজন পারাপার হচ্ছেন খালের পানি মাড়িয়ে।

চলতি মাসে বন্যায় ক্ষতি হওয়া এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি করা হলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে।

ওই এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, নতুন ব্রিজ পাইলেও উঠতে হয় কষ্ট কইরা। কষ্ট যদি পাই তাইলে টাকা খরচ কইরা কী লাভ হলো। এখন চিন্তায় আছি বড় বন্যা আসলেই ব্রিজের কারণে আমাদের বাড়িঘর ভাইঙ্গা যাইবো।

lal

আরেক বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, তারা বলছিল ব্রিজ যখন কমপ্লিট হবে তখন রাস্তা বাইন্দা দিয়া যাইব। কিন্তু তারা ব্রিজটা কইরা চইলা গেছে। এজন্য ব্রিজ হয়াও আমাদের কষ্ট। এখন মই লাগায়া চলাচল করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অর্থায়নে নির্মিত ব্রিজটির সংযোগ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজ চলছে। শিগগির রাস্তা নির্মাণ করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হবে।

লালমনিরহাট বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোনায়েম হোসেন বলেন, বিএডিসির অধীনে যে সেতু নির্মাণ হয়েছে তার সংযোগ সড়ক করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় তা ভেঙে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ওই ঠিকাদারের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার আবারও সড়ক নির্মাণ করবেন।

রবিউল হাসান/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।