সেই শাকিলা বেওয়ার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম
অশীতিপর শাকিলা বেওয়া (৮৫) থাকতেন ঢাকায় একমাত্র ছেলের সঙ্গে। কিন্তু সেই ছেলেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। হাতে কাপড়ের ব্যাগ ধরিয়ে তুলে দেন দিনাজপুরের হিলিগামী একটি বাসে। এমনকি গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় ছেলে তার বৃদ্ধ মাকে বলেন- দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাও, আর আমাদের বাড়িতে এসো না। অবশেষে সেই বৃদ্ধ মায়ের ঠিকানা হলো বৃদ্ধাশ্রমে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় শাকিলা বেওয়াকে পাঠানো হলো রংপুরের ‘সাফল্যের গল্প শোনাবো ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রমে।
রোববার (২৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় শাকিলা বেওয়াকে বৃদ্ধাশ্রমের গাড়িতে তুলে দেন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ। এসময় সেখানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দাস, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুন্নাহার আজাদী, উপজেলা শিক্ষা অফিসার সামসুল আলম ও আলোকিত সীমান্তের সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ছেলে বললেন, ‘চোখ যেদিকে যায় চলে যাও’
এর আগে গত শনিবার (২২ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে হিলি সিপি রোড় এলাকা থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। ওইদিনই সন্ধ্যায় ‘বৃদ্ধা মাকে বাসে তুলে দিয়ে ছেলে বললেন, ‘চোখ যেদিকে যায় চলে যাও’’- এ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা উপজেলা প্রসাশন ও বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, পারিবারিকভাবে বিতাড়িত হয়ে এক বৃদ্ধা যখন ঢাকা থেকে হিলিতে এসে অসহায়ভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন তখন বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সবার নজরে আসে। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। রোববার তাকে রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি, আর কোনো সন্তান নিজের বৃদ্ধ মাকে এভাবে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেবে না। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন: জীবিত মাকে তাড়িয়ে মৃত্যু সংবাদ পাঠাল মেয়ে
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, শাকিলা বেওয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি হিলিতে আসেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি ওই বৃদ্ধাকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখভালের জন্য আমাদের প্রতি নির্দেশনা দেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে থানা পুলিশের মাধ্যমে রোববার তাকে রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে। সেখানে উনার দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শাকিলা বেওয়া একমাত্র ছেলে জামিল হোসেনের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। সম্প্রতি বৃদ্ধ মাকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে দিনাজপুরের হিলিগামী একটি বাসে তুলে দেন ছেলে। এমনকি যাওয়ার সময় ছেলের কাছে মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে তা-ও দেননি জামিল হোসেন। বাস থেকে হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট সড়কের টেম্পু স্ট্যান্ড মোড়ে নেমে যান শাকিলা বেওয়া। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় রমজান মন্ডল নামের এক ব্যক্তির বাড়ির বারান্দায় শুয়ে-বসে দিন কাটছিল তার। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।
মাহাবুর রহমান/এমকেআর