অন্য জেলার আমের দখলে কানসাট বাজার, প্রতারিত গ্রাহক
দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে। আর এই জেলার আমের সুনাম রয়েছে দেশজুড়েই। তবে এবার ঘটছে ভিন্ন ঘটনা। এই খ্যাতি কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার আম নিয়ে এসে এই বাজারে বিক্রি করছেন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। আর এসব আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সরেজমিনে কানসাট আম বাজারে গিয়ে জানা যায়, নওগাঁ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলার আম্রপালি আমে ভরপুর এখন কানসাট আম বাজার। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম নষ্ট করতে বিভিন্ন জেলার আম এনে কানসাটের আম বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে যেহেতু কানসাট এলাকায় আম্রপালি আমের চাষ অনেক কম তাই বিভিন্ন জেলার আম কানসাটে বিক্রি হওয়ায় এখানকার চাষিরা এ আম উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে। আর ক্রেতাও বাড়বে।
জসিম আকরাম দিপু নামে এক আমচাষি বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলার আম কানসাট বাজারে আসছে। কারণ কানসাট আম বাজার এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার। এখানে সব সময় ক্রেতা বেশি থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী, এখানকার আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। তাই অন্য জেলার আম কানসাটে নিয়ে এসে এখানকার আম বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
কানসাট বাজারে আশ্বিনা জাতের আম বিক্রি করতে এসেছিলেন উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের লাউ ঘাটা এলাকার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গভীর রাতে ট্রাকে করে কিছু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কম দামে আম কিনে এনে সকালে ভ্যানে পসরা সাজিয়ে বসেন। এগুলোকে তারা কানসাটের আম বলে এখানে বিক্রি করছেন। এতে সুনাম নষ্ট হচ্ছে আমাদের সুস্বাদু আমের।
আব্বাস বাজার এলাকার আমচাষি আনারুল ইসলাম বলেন, অন্য জেলার আম এত সুমিষ্ট হবে না। বেশি মুনাফার লোভে বাইরের জেলার আম কানসাটে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। ওই আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহক।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, অন্য জেলার আম আসছে। বিষয়টি আমাদের জন্য ভালো। কারণ এই এলাকায় আম্রপালি, বারি-৪ চাষ কম হয়। আর মূলত বাইরের জেলা থেকে এসে কানসাট আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতারা সব আম কানসাটেই পাচ্ছেন। বাজারও জমে থাকছে।
কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু বলেন, বাইরের জেলার আম বিক্রি করলে অবশ্যই বলে দেওয়া উচিত। সেটি মানা হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, কানসাট এলাকায় আম্রপালি আমের চাষ অনেক কম। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলার আম কানসাটে বিক্রি হওয়ায় এখানকার চাষিরা এ আম উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে। তবে যারা অন্য জেলা থেকে আম এনে কনসাটে বিক্রি করছেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আমগুলো কোন এলাকার তার সঠিক তথ্য দিয়ে বিক্রি করার। যেন ভোক্তারা প্রতারিত না হয়।
এফএ/এএসএম