হার না মানা যমজ দুই ভাই

আসিফ ইকবাল আসিফ ইকবাল মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৬:১৩ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৩

চায়ের দোকান চালিয়ে নিজেদের পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছেন মেহেরপুরের যমজ দুই ভাই। দুজনের একজন পড়ছেন অনার্সে, অন্যজন ডিগ্রিতে। চায়ের দোকান চালিয়েই জীবন বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের চক্রপাড়ার আছানুল হক শহরের কাঁচাবাজারের মধ্যে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালাতেন। তিন ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে রেখে ২০১৭ সালে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। বড় মেয়ের বিয়ে হলেও স্কুলপড়ুয়া যমজ দুই ছেলে সান ও মুনকে নিয়ে সংসার সাগরে ভাসছিলেন আছানুলের স্ত্রী পারুল বেগম। একখণ্ড জমির ওপর কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ ছিল না। পাশে দাঁড়ানোর মতো তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজনও ছিল না তাদের। শেষ পর্যন্ত দুই ছেলেকে দিয়ে চায়ের দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন পারুলা বেগম।

দুই ছেলে এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই বাবার চায়ের দোকানের হাল ধরেন। পাশাপাশি মা পারুলা বেগম হাঁস-মুরগি পালন করে ছেলেদের সহযোগিতা করতেন। এসএসসি পাস করে মেহেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন যমজ দুই ভাই। যমজদের মধ্যে বড় হচ্ছেন সান। তিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আর মুন ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন।

হার না মানা যমজ দুই ভাই

আরও পড়ুন: দুই দোকানে মাসে ৬ লাখ টাকার চা বিক্রি

প্রতিদিন ভোর থেকে চায়ের দোকানে দুই ভাই কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত চা তৈরি করে কাঁচাবাজারের বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দেন। তাদের দোকানে বসেও অনেকে চা পান করেন।

যমজদের মা পারুলা খাতুন বলেন, ‘এত কষ্টের পরও সন্তানরা লেখাপাড়া করছে যা নিয়ে আমার গর্ব হয়। লেখাপড়া শেষে তারা ভালো চাকরি করে স্বপ্ন পূরণ করুক এটাই আমার প্রত্যাশা।’

হার না মানা যমজ দুই ভাই

যমজদের মধ্যে বড় সান বলেন, বাবা-মারা যাওয়ার পর আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। মায়ের অনুপ্রেরণায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সংসার চালানো আর লেখাপাড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাবার চায়ের দোকানকেই বেছে নিই। চায়ের দোকান চালিয়ে লেখাপড়া করা গর্বের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন: এক দোকানে ৫৩ রকমের চা

মেহেরপুর জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেট দলে জায়গা পেয়েছিলেন ভোট ভাই মুন। বাবা মারা যাওয়ার পর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও জীবনযুদ্ধে হাল ছাড়েননি। বড় ভাই সানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন তিনি।

হার না মানা যমজ দুই ভাই

মুন বলেন, ‘মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। এখনো তিনি অনেক কষ্ট করছেন। লেখাপাড়া শেষে চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফোটানোই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’

যমজদের শিক্ষক মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আব্দুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু বলেন, তাদের শিক্ষক হিসেবে আমি গর্বিত। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের মতো সংগ্রামী হওয়া।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।