যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা, সাবেক কারারক্ষী স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
কিশোরগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রী রোমা আক্তারকে (২২) হত্যা দায়ে সাবেক কারারক্ষী স্বামী খাইরুল ইসলামের (২৮) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন। এসময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃতদণ্ডপ্রাপ্ত খাইরুল ইসলাম টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামের আ. মজিদের ছেলে। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তিনি চাকরি হারান।
নিহত রোমা আক্তার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা মানিকখালী গ্রামের দুবাই প্রবাসী আ. মান্নানের মেয়ে।
কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট এম এ আফজল এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের তৎকালীন কারারক্ষী খাইরুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে রোমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে খাইরুল স্ত্রীকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের ফ্যামিলি কোয়াটারে বসবাস করতেন।
বিয়ের ছয় মাস পর খাইরুলকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও খাইরুল সন্তুষ্ট ছিলের না। ফের মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। সেই টাকা এনে দিতে স্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর থেকে প্রায়ই রোমার ওপর নির্যাতন করতেন খাইরুল।
২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর রাত্র ২টার দিকে খাইরুল যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে জখম করেন। এরপর খাইরুল রাত আড়াইটার দিকে শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন যে, রোমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কারাগারের কোয়াটার থেকে রোমাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখান থেকে রোমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোমাকে ছাড়পত্র দেন। পরে ২৯ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে রোমা আক্তারের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার পথে বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এরপর ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর রোমার মা বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন আদালতে আসামি খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন।
এসকে রাসেল/এমআরআর/এএসএম