সাপাহারে প্রতিদিন বেচাকেনা ২৫ কোটি টাকার আম

আব্বাস আলী
আব্বাস আলী আব্বাস আলী , জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৩

জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে গড়ে উঠেছে আমের বৃহৎ বাজার। দিনে দিনে জমজমাট হয়ে উঠেছে এ বাজারটি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আম কিনতে আসছেন। এ হাটে প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ন্যায্যদাম না পেয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা।

সাপাহার আম বাজারে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকে ভ্যান, ভটভটি ও অটোরিকশায় করে সাপাহার উপজেলাসহ পাশের পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আম বিক্রি করতে আসেন বাগানীরা। এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। হাটের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় মৌসুমী এসব ফল সাপাহার-পত্নীতলা সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে বেচাকেনা চলে।

এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে আমের আড়ৎ। যেখানে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন আম কিনতে। মে থেকে জুলাই ৩ মাস চলে আমের এ বাজার।

বরেন্দ্র এলাকার এঁটেল মাটির আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় এ জেলার আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। বর্তমানে বাজারে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম বাজারে উঠেছে। আম্রপালি প্রকারভেদে ২২০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা, বারি-৪ জাতের আম ২৭০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকা, ফজলি ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ৬ হাজার টাকা মণ হিসাবে বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায় আম্রপালি আম শীর্ষে। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের যেসব আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি রয়েছে ১৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৫ হেক্টর। এ আমের সুমিষ্ট ঘ্রান ভোক্তাদের আম খেতে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে। ভবিষ্যতে আম্রপালি আম হতে পরে এ জেলার ব্র্যান্ডিং।

বাগান মালিকরা বলেন, এ বছর অনাবৃষ্টি, শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি তেল এবং সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় আম উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ বেশি পড়েছে। এর ওপর আড়তদারদের সিন্ডিকেটে বাজারে ৪৮ কেজিতে মণের পরিবর্তে ৫২ কেজিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা হলে লাভবান হবেন তারা।

উপজেলার উলিগ্রামের আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর আম উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়েছে। গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারে নিয়ে আসবো, শ্রমিক সংকট। ৫০০ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ৪৮ কেজিতে মণ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ৫২ কেজিতে আমরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আবার আমের দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। আমের যে খরচ সে হিসাবে আমরা দাম পাচ্ছি না।

আড়তে ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ক্যারেটে আম সাজিয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা আয় করা যায়। প্রতিটি আড়তে ৫-১৫ জন শ্রমিক ক্যারেটে আম সাজানোর কাজ করেন। এ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মৌসুমী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর আড়ৎদার বকুল হোসেন বলেন, এ উপজেলার আম্রপালি অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এ আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩৩০০ টাকা মণ চলছে। এখান থেকে কিনে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ক্যারেট (৭৫ মণ) আম কেনা হয়।

আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমের মৌসুমে এ উপজেলায় মৌসুমী কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি) বিক্রি করেন। প্রকারভেদে একটু দুর্বল আকারের প্রতিটি ক্যারেট ৭০ টাকা এবং ভালোটা ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এ মৌসুমে বাজারে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যারেট বিক্রি হবে।

সাপাহার আড়ৎদার সমিতির সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি আমের আড়ৎ আছে। দিন যত যাচ্ছে আমের পরিমাণ কমছে, দাম বাড়ছে। প্রতিদিন এ বাজারে প্রায় ২৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। এসব আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৫২ কেজিতে মণের যে অভিযোগ চাষিরা করছেন তা ঠিক নয়, আমরা প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ কেজিতে মণ কিনছি। তবে চাষিরা আম বাছাই না করে সবগুলো একত্রে করে বিক্রি করতে আসেন। এতে ব্যবসায়ীরা চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে কয়েক কেজি বেশি ধরে আম নেন।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।