চিনির দামে দিশেহারা মৌচাষি, বন্ধ হওয়ার উপক্রম খামার

শামীম সরকার শাহীন
শামীম সরকার শাহীন শামীম সরকার শাহীন গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ১৮ জুলাই ২০২৩

হু হু করে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় একমাত্র মৌমাছির খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। উৎপাদিত মধুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ খামারির। এতে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে মৌ-খামারটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামের সাদা মিয়া ২০১৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মৌচাষ। মাত্র ২০ বক্স মৌমাছি দিয়ে তিনি খামার শুরু করেন। পুঁজি ছিল দেড়লাখ টাকা। বর্তমানে সাদা মিয়ার খামারে মৌ-বক্স রয়েছে ১৬০ পিস। প্রতিটি বক্সে মৌমাছি আছে ১৮-২০ হাজার। প্রতিবছর মৌমাছি বিক্রি করেন দুই লাখ পিসেরও বেশি।

প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত চলে মধু সংগ্রহ। এ সময়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে মৌ-বক্স নিয়ে জয়পুরহাটে যান খামারি সাদা মিয়া। এছাড়া ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহে ফরিদপুর ও শরীয়তপুরে, লিচু ফুলের মধু সংগ্রহে দিনাজপুর, মিষ্টিকুমরা ফুলের মধু সংগ্রহে ঠাকুরগাঁও, তিল ফুলের মধু সংগ্রহে পঞ্চগড় এবং বিচিত্র সব ফুলের মধু সংগ্রহ করতে যান সুন্দরবনেও যান তিনি।

আরও পড়ুন: ‘তেতো’ হয়ে উঠছে চিনি, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও প্রভাব নেই দেশে

খামারি সাদা মিয়া জাগো নিউজকে জানান, তার খামার থেকে চলতি মৌসুমে ৪ মেট্রিক টন ২৮০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে মধু রিফাইনের কোনো মেশিন না থাকায় উৎপাদন কম হয়েছে। মেশিন থাকলে আরও বেশি মধু উৎপাদন করা যেতো। মধু বিক্রি করেছেন ১০ লাখ টাকার।

তবে মধু বিক্রির নির্ধারিত বাজার না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান এ খামারি। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষিমেলা, বাণিজ্যমেলা অথবা অন্যান্য মেলায় স্টল সাজিয়ে মধু বিক্রি করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি পাইকারিতে মধু কিনলেও তারা উপযুক্ত মূল্য দিতে চান না। খুচরা গ্রাহকরা মধু কেনেন সামান্য পরিমাণে। অনলাইনে মধু বিক্রি হলেও ক্রেতার সংখ্যা বেশি নেই। তাই মধু বিক্রির জন্য নির্ধারিত বাজার প্রয়োজন।

খামারি সাদা মিয়া আরও বলেন, মৌমাছির প্রধান খাবার চিনি। এজন্য বছরের সাত মাস চিনি কিনতে হয়। খামারে প্রতিমাসে ৫০ কেজি ওজনের ১২ বস্তা চিনির প্রয়োজন হয়। সাত মাসে ৮৪ বস্তা (৪ হাজার ২০০ কেজি) চিনি কিনতে হয়। কিন্তু বর্তমানে চিনির বাজার বেশ চড়া। প্রতিকেজি চিনি এখন ১৪৫ টাকা। বাড়তি দামে চিনি কিনে মৌমাছি পালন সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: দাম বাড়ানোর প্রস্তাব: চিনির বাজারে ‘অস্থিরতা’

ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু জাগো নিউজকে বলেন, সাদা মিয়া একজন আদর্শ মৌচাষি। তার খামারে কাজের মাধ্যমে এলাকার অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। খামারি সাদা মিয়াকে সহযোগিতা করে টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, মধু সংগ্রহের সুবিধার্থে সরকারিভাবে মধু রিফাইন মেশিনের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে তাকে সরবরাহ করা হবে। মৌচাষি সাদা মিয়া যেন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: চিনির মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে মিষ্টির দাম

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা মৌ-খামারটি টিকিয়ে রাখতে যতটুকু সম্ভব আমরা সহযোগিতা করবো।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।