স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে শরীরে আগুন, গৃহবধূর মৃত্যু
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার পাঁচদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ রিতু আক্তারের (৩০) মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত রিতু উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাসানচর মাঝিকান্দি এলাকার আব্দুর রহিমের মেয়ে। স্বামী হেলাল সরকার (৪০) ও শাশুড়ি আলেয়া বেগমের নির্যাতন সইতে না পেরে রিতু শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে নিহতের স্বজনদের দাবি।
আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, শরীরে আগুন দিলেন যুবক
এ ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়িসহ চারজনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন রিতুর বাবা আব্দুর রহিম। অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) দিনগত রাত ৩টার দিকে স্বামী ও শাশুড়ির অপমান-নির্যাতন সইতে না পেরে গায়ে আগুন দেন রিতু।
আব্দুর রহিম অভিযোগ করে বলেন, ছয় বছর আগে পারিবারিকভাবে পাশের আধারা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হেলাল সরকারের (৪০) সঙ্গে আমার মেয়ে রিতুর বিয়ে হয়। তাদের চার বছর বয়সী এক ছেলে আছে। অভিযুক্ত হেলাল আগেও একটি বিয়ে করেছিল। আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকেই হেলাল ও তার মা আলো বেগম কারণে-অকারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি কথায় কথায় ‘তুই মরতে পারিস না’ বলে উসকানি দিতো। বিষয়টি সে আমাকে জানালে আমি জামাইকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমাকে হুমকি-ধামকি দেয়।
আরও পড়ুন: রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিজ শরীরে আগুন দেওয়া যুবক মারা গেছেন
তিনি বলেন, গত ১১ জুলাই রাত ৩টার দিকে রিতুর সঙ্গে জামাই ও শাশুড়ির ঝগড়া হয়। এসময় হেলাল রিতুকে বলে, ‘তুই মরতে পারিস না? তুই মরলেই তো আমি আবার বিয়ে করার সুযোগ পাই’। রিতু এ কথা সহ্য করতে না পেরে ঘরে থাকা কেরোসিন গায়ে ছিটিয়ে আগুন দেয়। ঘটনাটি জামাই মোবাইল ফোনে আমাকে জানায়। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রিতুকে প্রথমে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানেই পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শনিবার সন্ধ্যায় মারা যায় রিতু। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভুক্তভোগীর বাবা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্তে নামে এবং শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে ভুক্তভোগীর জবানবন্দি রেকর্ড করে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এমআরআর/জেআইএম