সৌদি আরবে কারখানায় আগুন
দুই সন্তানকে এতিম করে চলে গেলেন জুবায়ের ঢালী
সৌদি আরবে কারখানায় আগুন লেগে যে নয়জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাসিন্দা জুবায়ের ঢালী (৩৮)। শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে এ খবর জানার পর থেকেই নিহতের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ভিড় করছেন সেখানে।
নিহত জুবায়ের ঢালী উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কোলচুরি সস্তাল এলাকার ইউনুস ঢালীর ছেলে।
সৌদি আরবের হুফুফ ইন্ডস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে আগুন লেগে নয় বাংলাদেশি মারা যান। তাদের মধ্যে জুবায়ের ঢালী একজন।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুবায়ের ঢালী ২০২১ সালে সৌদি আরবে যান। যাওয়ার আগে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকেও মোটা টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে জুবায়ের সবার বড়। বিয়ের পর দুই সন্তানের বাবা হন তিনি। ছেলে আব্দুল্লাহ (৬) ও মেয়ে আয়শাকে (৪) সচ্ছল জীবন দেওয়াসহ বাবা-মা, ভাই-বোনদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
সৌদি আরব গিয়ে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় কাজ নেন জোবায়ের। ভালোই যাচ্ছিল দিন। একটু একটু করে ধারদেনাও শোধ করছিলেন। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে ওই কারখানায় আগুন লেগে মারা যান তিনি।
শনিবার বিকেলে সৌদি আরব থেকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তার পরিবার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এরপর থেকেই চলছে শোকের মাতম। ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়ে এখনো বুঝতে শেখেনি কী হারিয়েছে, তাই নির্বাক হয়ে সবার মুখের দিকে বারবার তাকাচ্ছে তারা।
নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেলো। দুই ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেলো। এত ছোট বয়সেই ওরা বাবাকে হারালো। আমি এই বাচ্চাদের কীভাবে বড় করবো? কীভাবে ঋণের টাকা শোধ করবো?
তিনি বলেন, সরকারের কাছে দাবি জানাই, যেন আমার স্বামীর মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। আমার সন্তানরা যেন তার বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পায়।
নিহতের ছোট ভাই আকাশ ঢালী বলেন, আজ (শনিবার) আমরা ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। আমাদের এক আত্মীয় তার মৃত্যুর খবরটি আমাদের জানিয়েছেন।
কালকিনির আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ পারভেজ বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। আমি ঢাকায় রয়েছি। নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, মরদেহ আনার ব্যাপারে নিহতের পরিবারে পক্ষ থেকে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে আবেদন করতে হবে। তারপর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সই দেবেন। এরপর আমি সই করবো। সেটি বিমানবন্দরে দেখালে কাজ হবে। যদি কোনো জটিলতা হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করবো।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/কেএএ