বিলে জলাবদ্ধতা, ৫০০ বিঘা জমিতে আমন চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা
টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুড়িখালি বিলের প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ রাখায় ওই বিলটি গত প্রায় এক মাস জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সময়মতো জমি চাষ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র কৃষক ও জমির মালিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালার খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা মৌজার বিশাল এলাকা জুড়ে সুড়িখালি বিল। এ বিলে প্রায় দুইশো কৃষকের ৫০০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে আমন এবং বোরো চাষ হয়। বিলটি খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রাম থেকে পশ্চিমে দরমুড়াগাছা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মুড়াগাছা থেকে উত্তরে শালিখা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে বর্তমানে এই বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ নেই।
ভুক্তভোগী চাষিরা জানান, সুড়িখালি বিলের সামান্য অংশে মাছের ঘের। বেশিরভাগ জমিতে ধানচাষ করা হয়। সম্প্রতিকালের অতি বৃষ্টিতে বিলটি সম্পূর্ণ ডুবে আছে। এই ঘটনার নেপথ্যে সরকারি বন্দোবস্ত পাওয়া খাস জমি অবৈধভাবে বিক্রি করার পর প্রভাবশালীরা ওই জমির ওপর বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক নুর মোহাম্মদ সরদার জাগো নিউজকে জানান, বিলের ৩০৫১ দাগের ৬৬ শতক জমি ১৯৮৮-৮৯ সালে সরকার মুড়াগাছা গ্রামের ভূমিহীন গোসাই অধিকারীকে বন্দোবস্ত দেয়। উক্ত গোসাই অধিকারীর ছেলে কার্তিক অধিকারী ১০ বছর আগে মুড়াগাছা গ্রামের মৃত সৈয়দ নুরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ সেকান্দারের কাছে সরকারি বন্দোবস্তের নিয়ম লঙ্ঘন করে বিক্রি করেন। পরে সৈয়দ সেকান্দার ওই ক্রয়কৃত জমিতে বাঁধ দিয়ে বিলের পানি অপসারণে বাধা সৃষ্টি করেছেন।
এ বিষয়ে উক্ত বিলের জমির মালিকরা তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে পানি অপসারণের জন্য পাইপ স্থাপনের নির্দেশ দেন। কিন্তু পাইপ স্থাপন করতে গেলে সৈয়দ সেকান্দার গং সেই পাইপগুলো স্থাপনে বাধা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় সৈয়দ সেকেন্দার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
কৃষক সুমন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, বিলে আমন ধান আবাদের আগমূহূর্তে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আমনচাষ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বহু জায়গায় ধর্ণা দিলেও সংশ্লিষ্ট কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু জাগো নিউজকে বলেন, সুড়িখালি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরাতন খালটি পুনর্খনন করা প্রয়োজন, যেটা শালিখা নদীতে গিয়ে পড়বে। তাহলে বিলসহ পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে। বিষয়টি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর জাগো নিউজকে বলেন, বিলটি দুই ফসলি। বতর্মানে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে কৃষকের ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মতার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এফএ/এএসএম