বিয়ের পাঁচদিনেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার রিতুর

ইমরান হাসান রাব্বী ইমরান হাসান রাব্বী , শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৩

বিয়ের মাত্র পাঁচ দিনেই সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার ইশরাত জাহান রিতুর। মাত্র পাঁচদিন আগে রিতুর বিয়ে হয় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ছানোয়ার জাহানের সঙ্গে। এরইমধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন রিতু। এখন দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছানোয়ার জাহান শেরপুর সদর উপজেলার চরজঙ্গলদী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। গত শুক্রবার (৭ জুলাই) তাদের বিয়ে হয়।

২০১৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ছানোয়ার জাহান। অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সালে অবসর নিয়ে গ্রামেই থাকতেন। সদর উপজেলার সাপমারী দ্যা নিউ অনুপম একাডেমিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন তিনি। শুক্রবার জামালপুরের তুলশীরচর ইউনিয়নের হনুমানেরচর গ্রামের কৃষক এমদাদুল হকের মেয়ে ইশরাত জাহান রিতুকে (১৮) বিয়ে করেন ছানোয়ার।

বিয়ের মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় বুধবার সকালে জামালপুর সদর উপজেলার বগালী গ্রামে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় তার। বিয়ের পাঁচ দিনের মাথায় তার মৃত্যুতে দুই পরিবার এখন বিপর্যস্ত।

চরজঙ্গলদী গ্রামের মোল্লাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছানোয়ারের বাড়িতে এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভিড়। স্বামীর অকালমৃত্যুর শোকে প্রায় নির্বাক নববধূ রিতু। বসতঘরের একটি খাটে দুই পাশে তার শোকাহত বাবা এমদাদুল হক ও মা চায়না বেগম বসে ছিলেন। ছানোয়ারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও মা নুরুন্নাহারসহ স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ।

বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে কিছু না বলেই বের হয়েছিলেন ছানোয়ার। ব্যবহৃত মুঠোফোনটি ঘরেই রেখে যান।

রিতু জানান, সকাল ৯টার দিকে এক ব্যক্তি তার শ্বশুর জাহাঙ্গীরকে ছানোয়ারের মৃত্যুর সংবাদটি জানান।

রিতুর মা চায়না বেগম বলেন, তার মেয়ে অকালে বিধবা হয়েছেন। মেয়ের শ্বশুর জীবিত আছেন। এখন তিনিই (শ্বশুর) মেয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহত ছানোয়ার জাহানের মরদেহ চরজঙ্গলদী গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। রাত ১০টায় জানাজা শেষে চরজঙ্গলদী মোল্লাবাড়ি গণকবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পেশায় ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছানোয়ার ছিলেন বড়। মেজ ছেলে শিপন মোল্লা মালয়েশিয়া প্রবাসী। আর ছোট ছেলে রিপন মোল্লা সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। একমাত্র মেয়ে বৃষ্টি আক্তার স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।

বাবা জাহাঙ্গীর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জামালপুরে চাকরির একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল ছানোয়ার। বাড়িতে ও ঠিকই ফিরল। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। বাবা হয়ে এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করবো?

জাহাঙ্গীর বলেন, ছানোয়ার সেনাবাহিনী থেকে নিয়মিত অবসর ভাতা পেতেন। ভাতা বইয়ে তাকে (জাহাঙ্গীর) নমিনি করা আছে। এখন সংসার চালাতে টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ছানোয়ারের অবসর ভাতাটি যেন অব্যাহত রাখা হয়, সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।