বেনাপোলে রাজস্ব-আমদানি দুটোই কমেছে

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ১১ জুলাই ২০২৩

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।

একই সময় ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় আমদানি কম হয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন পণ্য। বেনাপোল কাস্টম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।

বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাস্টস ও বন্দরে হয়রানি এবং বন্দর অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মের কারণে গত ১০ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টম হাউজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের পণ্য আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন। আমদানি কম হয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে গত অর্থবছরে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে রাজস্বও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বেনাপোলে রাজস্ব-আমদানি দুটোই কমেছে

যশোরের আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘আমরা মোটরসাইকেল পার্টস আমদানি করে সারা দেশে বিক্রি করি। তকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারিনি। পণ্য আনতে না পারায় আমাদের লোকসান হচ্ছে। সামনে কী পরিস্থিতি হবে কে জানে!’

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন (শতভাগ টাকা পরিশোধ) দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। তারপরও গত বছরের তুলনায় আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ শতাংশ।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটির কারণে জুন মাসের কয়েকদিন বন্ধ ছিল। সে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম রাজম্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া বন্দরে কোনো হয়রানি করা হয় না বলেও দাবি করেন।

জামাল হোসেন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।