বাঁশে লাখপতি ধামইরহাটের হিরন

আব্বাস আলী
আব্বাস আলী আব্বাস আলী , জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৩

নওগাঁর ধামইরহাটে বাঁশ থেকে বিভিন্ন নান্দনিক পণ্য তৈরি করে সফলতার দেখা পেয়েছেন উদ্যোক্তা হিরন আহমেদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে হিরনের এসব পণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাঁশ থেকে তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করে প্রতিমাসে তার আয় অন্তত ২ লাখ টাকা।

জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত দেউলবাড়ী গ্রামের যুবক হিরোন আহমেদ। পড়াশুনার পাশাপাশি গ্রামের পাশে রাঙামাটি বাজারে ২০০৮ সাল থেকে স্টুডিওর ব্যবসা করতেন। ২০১৪ সালে স্টুডিওটি নান্দনিক ডিজাইনে সাজানোর প্রয়োজন মনে করেন তিনি। এসময় বাঁশের নকশার কারুকার্য দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় স্টুডিওটি। পরে ২০১৯ সালে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বাঁশ কাটার যন্ত্রাংশ কিনে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন বাঁশ থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘বাঁশ বিলাস’।

jagonews24

এক পর্যায়ে বাঁশ নিয়ে কাজ করা দেশের বাইরের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউব থেকে সহযোগিতা নেন তিনি। বাঁশ থেকে ল্যাম্প, শোপিস, পানির বোতল, ফুলদানি-কলমদানি, মগ, জগ ও ট্রেসহ প্রায় শতাধিক পণ্য তৈরি করেন এ উদ্যোক্তা।

এসব বাঁশ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। ঘুন বা পোকা ধরা থেকে রক্ষা পেতে ও টেকসই করতে বাঁশে তিনধাপে রাসায়নিক উপকরণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে এসব বাঁশ আকার ভেদে কেটে প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হয়।

jagonews24

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালি, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এসব পণ্য। পণ্যগুলো প্রকারভেদে ১০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

উদ্যোক্তা হিরোন আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালে ভিন্ন আকারে স্টুডিওর বেলকোনি সাজাতে চেয়েছিলাম। সেই আগ্রহ থেকে শুরু। এখন বাঁশের বিভিন্ন নান্দনিক পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখে সেগুলো অনুসরণ করতাম। কিভাবে তৈরি করতে হবে তা শিখতাম। বাঁশগুলোকে সুন্দর করে আকারভেদে কেটে আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। বাঁশকে টেকসই করতে রাসায়নিক উপকরণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়।

jagonews24

তিনি বলেন, আমার তৈরি পণ্য অনলাইনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এগুলো পাঠানো হয়। অনলাইনে বিভিন্ন উদ্যেক্তা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত আছি। এছাড়া ‘বাঁশ বিলাস’ নামে ফেসবুক পেজ রয়েছে।

এই উদ্যোক্তা জানান, প্রকারভেদে ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় এসব পণ্য। প্রতিমাসে এ কারখানা থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। যা থেকে বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো। প্রতিদিনই আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজ দেখতে আসছেন অনেকে। আবার অনেকে পছন্দের পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

হিরনের এ কারখানায় পাঁচজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাদের তিনি নিজ হাতে কাজ শিখিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শহিদুল ইসলাম।

jagonews24

তিনি বলেন, প্রায় দেড় বছর থেকে এ কারখানায় কাজ করছি। কী কাজ কীভাবে করতে হবে হিরোন ভাই আমাদের শিখিয়ে দেন। এখানে প্রতিদিন মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা পাই। এ কাজ করে সংসারে জীবিকা চলে। আর কারখানায় যেসব পণ্য তৈরি হয় সেগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। যাদের প্রশিক্ষণ এবং ঋণ প্রয়োজন অফিসে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।