দেড়শ বছরের পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৬

চট্টগ্রামে ওয়াকফ স্টেটের দেড়শ বছরের পুরনো পুকুর ভরাট করে প্রভাবশালীরা মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। পুকুরটি ভরাট হওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় পানি সংকটের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দুর্ভোগে পড়বে স্থানীয়রা।

চন্দনপুরা আব্দুল হামিদ সওদাগর মসজিদ পুকুর। দেড়শ বছরের পুরনো এটি। মসজিদের মুসল্লিদের অজু করার জন্য সে সময়ে পুকুরটি খনন করা হলেও পরবর্তিতে এলাকার মানুষের জন্য একটি সম্পদে পরিণত হয়।

এক সময় সুপেয় পানির জন্য পুকুরটি এলাকাবাসী ব্যবহার করতো। ওয়াসার পানি আসার পর থেকে পুকুরের পানি ব্যবহার কম হলেও অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ পুকুরটি এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখন পুকুরটিতে দৃষ্টি পড়েছে প্রভাবশালী একটি মহলের। পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মার্কেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ইতোমধ্যে পুকুরটি প্রায় ভরাটও করা হয়ে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক (মহানগর) আজিজুর রহমান মল্লিক বলেন, আইনে বলা আছে জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। পুরানো এ পুকুর ভরাটের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আছে কিনা জানি না। তবে এ ধরনের কোনো বিষয় আমাদের নজরে আসলে সেটা আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে স্থানীয় আব্দুল হামিদ সওদাগর মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন দশ কাঠা জমির উপর একটি পুকুর খনন করা হয়। পরবর্তীতে তা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে সরকার। পুকুরটি খননের পর থেকে এলাকার জনসাধারণ মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় অজু করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছিল।

গুল-এজার বেগম স্কুলের বিপরীতে রাস্তার পাশে অবস্থিত শান বাঁধানো ঘাট দেয়া দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি এতোদিন পথচারীসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পুকুরের একপাশে চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়ক, যেটি বাকলিয়ার ডিসি রোডের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। অন্যপাশে সারি সারি নারিকেল গাছ। নগরীতে এ ধরণের পুকুর ও তার পাড়ের সৌন্দর্য কমই চোখে পড়ে। এতোদিন এ সৌন্দর্য সাধারণ মানুষের চোখে পড়লেও এখন সেই পুকুর প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।

প্রতিদিন রাতে পুকুরটিতে ট্রাকে করে বালি এসে পড়ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে, মসজিদের আয়তন বাড়ানোর নামে মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুরটি ভরাট করতে চাইছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এর আগেও কয়েকবার পুকুরটি ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর বিরোধিতায় ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অভিযানে সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী বলেন, আন্দরকিল্লা থেকে চকবাজার পর্যন্ত এটিই একমাত্র পুকুর। আশপাশের এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এ পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে। এখন মসজিদ কমিটি মসজিদ বড় করার নামে পুকুরটি ভরাট করে ফেলতে চাইছে। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসা করা।

তিনি বলেন, জনৈক মজু কন্ট্রাক্টরের জোগসাজসে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মার্কেট করা হচ্ছে। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে সোচ্চার। পুকুরটি ভরাট থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা আশা করছি।

সূত্র মতে, ২০০৯ সাল থেকে পুকুরটিতে প্রভাবশালী মহলের কুদৃষ্টি পড়ে। সেই থেকেই নানাভাবে পুকুরটি ভরাট করতে চেষ্টা চালায় মসজিদ পরিচালনা কমিটি। পুকুর ভরাট করে সেখানে মার্কেট করার উদ্যোগও নেওয়া হয় তখনই। তবে এলাকাবাসীর বিরোধিতায় সে উদ্যোগ থেকে ফিরে আসে মোতোয়াল্লি কমিটি। কিন্তু হাল ছাড়েনি তারা।
 
দুই বছর আগে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়কের উন্নয়নকাজ করে সিডিএ। সড়কের প্রস্থ বাড়ানোর লক্ষ্যে সিডিএ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে পুকুরের পাশের ১০ ফুট জায়গা ভরাট করে। এ সুযোগে মসজিদ কমিটি পুকুরটি পুরোপুরি ভরাট করে ওই স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার জন্য আবার কার্যক্রম শুরু করে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক পুরানো পুকুর এটি। সেই পুকুর ভরাট করে মার্কেট করবে। অথচ তারা মসজিদের আয়তন বাড়ানোর জন্য পুকুরটি ভরাট করছে বলে প্রচার করছে। এলাকাবাসী বিরোধীতা করলেও তারা কাজ অব্যাহত রেখেছে।

ইতোমধ্যে, পুকুরের পুরোটাই ভরাট করা হয়ে গেছে। আবদুল হামিদ সওদাগর মসজিদ ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। পাশাপাশি মসজিদের পুকুরটি বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা পুকুরে বালির উপর ভবন তৈরির পাইলিং কাজ চলছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক পুকুরের উপর পাইলিং কাজ করছে। মসজিদের ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলেও পুকুরে ভবন নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। তাছাড়া মসজিদ ভবন নির্মাণের অনুমতিতে সিডিএ উল্লেখ করেছে, ‘প্রস্তাবিত সাইটের পূর্ব দিকে একটি পুকুর বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত পুকুরের অংশ বাদ দিয়া মসজিদ নির্মাণ করতে হবে এবং বিদ্যামান পুকুরের আকৃতির কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ এ নীতিমালার ও পাত্তা দিচ্ছে না মসজিদ কমিটি।

এ বিষয়ে কথা হলে আবদুল হামিদ ওয়াকফ অ্যাস্টেটের মোতোয়াল্লি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না। পুকুর যেমন আছে, তেমন থাকবে। চারতলা ভবন হবে, সেজন্য পাইলিং কাজ চলছে। পাশের লোকজন ভুল বুঝে এসব কথা বলছে।

একে/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।