রাসিকের কোটি টাকার খেলনা পাইলটের রেস্তোরাঁয়
শিশুদের খেলার জন্য ৫ সেট খেলনা কিনেছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। মূলত এগুলো রাইড। বিনোদন কেন্দ্রে বিনামূলে শিশুদের আনন্দ দিতো এসব রাইড। তবে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এসব রাইড খুলে রাখা হয়। এর কিছুদিন পরই এসব রাইড ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নোঙরে’।
মূলত এসব রাইড দিয়েই ক্রেতাদের আকর্ষণ করে আনা হয় নোঙর রেস্তোরাঁয়। তবে এগুলো তিনি কিনে কিংবা ভাড়া নিয়ে আসেননি। সিটি করপোরেশন বলছে মেয়রের নির্দেশেই কোটি টাকার খেলনা ব্যবহার করছে নোঙর।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় আগত শিশুদের বিনোদন ও আনন্দ দিতে কেনা হয় ৫ সেট রাইড। শিশুদের বিনোদনের জন্য ২০১৩ সালে এগুলো কেনা হয় এক কোটি পাঁচ লাখ টাকায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর পাঠানপাড় পদ্মা পাড়ের লালন শাহ্ মঞ্চের পাশ থেকে শুরু করে বড় একটি অংশ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে থেকে লিজ নিয়ে নোঙর নামক রেস্তোরাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। চালুর পরপরই নোঙর তার নিজস্ব সীমানা ঘিরে দেয় তারকাটা, বেড়া ও ওয়াল দিয়ে। মূলত এই জায়গাটি তিনি পার্কের আদলে তৈরি করেন।
শুরুর দিকে একটি রেস্তোরাঁ থাকলেও মানুষের মূল অকর্ষণ পার্কের ওপর। পার্কের একেবারে শেষপ্রান্তে বসানো হয়েছে চিড়িয়াখানার সেই রাইডগুলো। বিকেল গড়ালে সেখানে বাচ্চাদের ভিড় বাড়ে। মূলত খেলনার প্রতি আকর্ষণ দেখিয়েই রেস্তোরাঁর ক্রেতা টানেন তারা। যদিও খেলনাগুলোতে উঠতে শিশুদের কোনো টাকা দিতে হয় না।
রাইডগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের এখানে উন্নয়ন কাজ চলমান। উন্নয়ন কাজ চলার সময় আমরা এগুলো খুলে রেখেছিলাম। মেয়রের নির্দেশেই এগুলো নোঙরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে এগুলো নেওয়া হয়েছে লিজ নাকি ভাড়ায় সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এগুলো প্রধান প্রকৌশলী বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, খেলানগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এগুলো মেয়রের নির্দেশেই নোঙরে পাঠানো হয়েছে। তারা এগুলো ঠিক করে সেখানে বসিয়েছে।
লিজ বা কেনা ছাড়া কীভাবে ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো তো শিশুদের খেলার জন্যই রাখা হয়েছে। সেখানে তো কোনো টাকা নিচ্ছে না। কীভাবে গেছে সেগুলো দেখে জানাতো পারবো।
তবে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, লিজ বা ভাড়া ছাড়া এটি ব্যবহার করা যাবে না। কীভাবে এগুলো হয়েছে সেটি আমি খোঁজ নেবো।
এ বিষয়ে নোঙরের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর সেখানে মেয়র একদিন ঘুরতে যান। তিনি দেখে বলেন, এখানে কিছু খেলনা দিলে ভালো হয়। এগুলো রাসিকের জিনিস। তারা এখানে রেখে গেছেন। আমার হলে তো আমি এগুলোতে টাকা নিতাম।
তিনি দাবি করেন, এই খেলনাগুলো তিনি ব্যবহার করছেন না। যেহেতু মূল জমির মালিক সিটি করপোরেশন, তিনি তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এই রেস্তোরাঁ বানিয়েছেন। খেলানগুলো তারাই রেখে গেছে। বাচ্চারা এগুলোতে বিনামূলেই খেলে।
এফএ/জেআইএম