পদ্মা সেতুর এক বছর

ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে বাস বেড়েছে ১০০

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ০৪ জুলাই ২০২৩

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শরীয়তপুরে পরিবহন ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকা-শরীয়তপুরে রুটে সাতটি কোম্পানির ২৫০টি বাস চলাচল করতো। বর্তমানে ৩৫০টি বাস চলাচল করছে এ রুটে।

তিন যুগ ধরে জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা পরিবহন ব্যবসা ঢাকাসহ সারাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করেছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা। এতে নতুন করে অন্তত দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

jagonews24

জেলা পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকে শরীয়তপুরে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবহন ব্যবসা শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত সেটি জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। শুধু শরীয়তপুর থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যেতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে জেলার বাসিন্দাদের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জে যেতে হলে পদ্মা নদী পার হতে হতো। শিমুলিয়া-জাজিরা, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথ দিয়ে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিতেন যাত্রীরা। পণ্য পরিবহনও নৌপথে করা হতো। পদ্মা সেতু চালুর পর পরিবহন ব্যবসা ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে সম্প্রসারিত হয়েছে। শহরের তিনটি স্থানে হচ্ছে নতুন বাস তৈরির অবকাঠামোর কাজ। সেতু উদ্বোধনের পর থেকে বিআরটিসির বাসগুলো প্রত্যেক উপজেলা থেকে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছ।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষারের বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী হারুন হাওলাদার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে ঝড়ে স্পিডবোট ডুবে ছেলেকে হারিয়েছি। তখন যদি পদ্মা সেতু থাকতো তাহলে আর ছেলেকে হারাতে হতো না।’

jagonews24

হারুন হাওলাদার বলেন, ‘এখন আমি সপ্তাহে দুদিন ঢাকা যাই। মিরপুরে আমার বাড়ি আছে। সেখানে যেতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। যেকোনো বাস সবসময় পাওয়া যায় এবং বাসগুলো নতুন।’

আন্তঃজেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, প্রায় তিন যুগের বেশি সময় বাস মালিকরা কখনো ব্যবসায় সফল হতে পারেননি। তবে পদ্মা সেতু হওয়াতে তাদের ভাগ্যে সুবাতাস লেগেছে। এখন শরীয়তপুরের মানুষ পরিবহন খাতে ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছেন। অন্য অন্য খাতে বিনিয়োগ না করে ধনাঢ্যরা পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন। জেলায় দিন দিন বাসের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

নড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদুল ইসলাম বাবু রাড়ীসহ ১২ জন ব্যবসায়ী মিলে ‘কীর্তিনাশা পরিবহন’ নামে একটি বাস কোম্পানি প্রতিষ্ঠান করেছেন। নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে কোম্পানিটির ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস চলাচল করছে নড়িয়া টু ঢাকায়।

jagonews24

শহীদুল ইসলাম বাবু রাড়ী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর এক বছরে আমাদের পরিবহন ব্যবসা ভালোই চলছে। মানুষের চলাচলেও অনেক সুবিধা হয়েছে। এতে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও লাভবান।’

শরীয়তপুর শহর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৭১ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। প্রতিদিন অন্তত ১৭ হাজার মানুষ শরীয়তপুর-ঢাকা যাতায়াত করছেন। ভাড়া ২৫০ টাকা। বাস শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হলে ৩০০ টাকা। জানা গেছে, গত বছরের জুনে শরীয়তপুরে পরিবহন খাতে শ্রমিক ছিলেন ৬৫০ জন। বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১০০ জন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে গত এক বছরে পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি সুফল এসেছে। এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।