জীর্ণ ভবন

ঝুঁকি নিয়ে চলছে দেশের প্রাচীন আইন কলেজের পাঠদান

মোবাশ্বির শ্রাবণ মোবাশ্বির শ্রাবণ , জেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, ০১ জুলাই ২০২৩

বাংলাদেশের প্রাচীন কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আইন কলেজ। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই কলেজটি আইন শিক্ষায় অবদান রেখে আসছে। এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় আইন পেশায় জড়িত আছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বেশিরভাগ সদস্য এই কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরাই জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

কিন্তু বর্তমানে সেই কলেজটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিনের একটি পুরাতন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ভবনের বিভিন্ন অংশ খসে পড়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। আর এই অবস্থার মধ্যেই প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এখানে ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

বিভিন্ন জটিলতার কারণে কলেজটির সংস্কার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। কলেজের নিজস্ব ফান্ড থাকা স্বত্বেও নতুন কোনো ভবন করা হচ্ছে না। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। দিনের পর দিন এই জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। অথচ এই কলেজেরই সাবেক ছাত্র ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

এই কলেজ থেকেই পড়াশোনা করেছেন বর্তমানে অ্যাপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পূর্ব পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে তিনটি ল কলেজ ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল নারায়ণগঞ্জ ল কলেজ। ১৯৬৫ সালের প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬৬ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এই কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম তোলারাম কলেজে ছিল। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে জমি লিজ নিয়ে তোলারাম কলেজ থেকে আলাদা হয়ে আমলাপাড়ায় এলাকায় স্থানান্তর হয়। সাড়ে ১৬ শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি বিল্ডিং তোলা হয়। পরবর্তীতে পাশাপাশি আরও দুইটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। ৫২ বছর ধরেই কলেজটি লিজ সম্পত্তিতেই রয়েছে। আরএস পর্চায় জমিটি নারায়ণগঞ্জ ল কলেজের নামে দখল রয়েছে।

২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এই কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ডিসি দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার ডিসি আনিসুর রহমান কলেজের জন্য সম্পত্তি কেনার জন্য প্রস্তাব করে আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটা কার্যকর হয়নি। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

এরপর ২০২০ সালের পর থেকে আবার এই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। সেইসঙ্গে ২০১০ সাল থেকে কলেজের সমস্ত লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে আসছে। যার ফলে বর্তমানে কলেজের একটি ফান্ড তৈরি হয়েছে। চাইলে এ টাকা দিয়ে সংস্কার কাজ করা যায় বলে সংশ্লিষ্টদের মত।

এ বিষয়ে গভর্নিং বডির সাবেক চেয়ারম্যান ও কলেজের সাবেক ছাত্র অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সময় সুযোগের অভাবে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমি চাই বর্তমানে যেন এই কলেজটির উন্নয়ন করা হয়। কারণ, নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ল কলেজ।

কলেজের অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের নিজস্ব ফান্ড রয়েছে। কলেজের জায়গাটিরও লিজ নেওয়া রয়েছে। এটা একটা পরিত্যক্ত জমি ছিল। আমরা দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরেই এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এই অবস্থায় ওপর মহল একটু নজর দিলেই কলেজটির সংস্কার কাজ হয়ে যায়। কলেজের ভবন নির্মাণ করার জন্য সয়েল টেস্টও করা হয়েছিল। কয়েকটি কক্ষও ভাঙা হয়েছিল। কিন্তু এখন কোনো এক অজানা কারণে কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। জেলাবাসীর স্বার্থে এই কলেজটির সংস্কার করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, কলেজটির সংস্কার করা না হলে সবার চোখের সামনেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই ভালো রেজাল্ট করে থাকে। সেইসঙ্গে এখানের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিয়ে থাকেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। নারায়ণগঞ্জের মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ হচ্ছে এটি। তারপরেও কলেজটির সংস্কার না হওয়া খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ফয়েজউদ্দিন আহমদ লাভলু জাগো নিউজকে বলেন, কলেজটি যে জায়গায় হয়েছে সেটি সরকারি জায়গা। সে জায়গাটি নারায়ণগঞ্জ ল কলেজের করার জন্য চেষ্টা করছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এমপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা অচিরেই কলেজের বিল্ডিংয়ের কাজ ধরবো। এরইমধ্যে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, ঈদের পরই কাজ ধরতে পারবো। এখানে সুন্দর একটি ভবন হবে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।