সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে
শুধু ঈদ নয়, ওরা আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে
রাত পোহালেই উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সেই আনন্দে দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরেই বইছে খুশির আমেজ। কিন্তু আনন্দ নেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের পরিবারে। নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাদের পরিবারে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস।
নাদিম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। তিনি ওই উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গুমেরচর এলাকার আব্দুল করিম ও আলেয়া বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলেসন্তান। নাদিমের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। দুই ছেলের মধ্যে ডিগ্রিতে পড়ছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত এবং ছোট ছেলে রিশাদ আব্দুল্লাহ পড়েন প্রথম শ্রেণিতে।
নাদিম হত্যার দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। ঈদের আগে বাবার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত। প্রথমবার বাবাকে ছাড়া ঈদ করবেন তিনিসহ তার দুই ভাই। স্বজনরা সান্ত্বনা দিলেও বাবার অভাব কিছুতেই যেন পূরণ হচ্ছে না তার। চোখে-মুখে এখনো ঘুরে ফিরছে ভয়ানক সেই দৃশ্য।
রাব্বিলাতুল জান্নাত জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। ঈদের আগের রাতে আমাদের বাসা থাকতো উৎসবমুখর। কিন্তু এইবার আব্বুও নেই ঈদও নাই। ঈদের আগে মার্কেটে গিয়ে দোকানিকে আব্বু বলতেন—সবচেয়ে দামি জামা বের করো আমার মেয়ের জন্য। এখন আর এমন কথা কেউ বলবেন না। কেউ আর জিজ্ঞেস করবেন না, আর কী কী বাকি আছে চল কিনে নিয়ে আসি।’
হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল পর্যন্ত বাবার সঙ্গেই ছিলেন জান্নাত। সেই স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘১৪ জুন বাবাকে যেদিন মেরে ফেলা হয়, সেদিন ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হয়ে এসেছি। বিকেল পর্যন্ত একসঙ্গেই ছিলাম। ১৫ জুন বাবা যেদিন মারা গেলেন, সেদিন আমাকে নিয়ে তিতুমীর কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবা আমাকে আর ঢাকায় নিয়ে যেতে পারলেন না। আমাকে ছাড়াই চলে গেলেন। তাকে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই। এতিম করা হলো আমাকে আর আমার দুই ভাইকে’।
জান্নাত আরও বলেন, ‘মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবা সবসময় সত্যের পক্ষে লিখেছেন। আমি তার অসমাপ্ত কাজগুলো করে যেতে চাই। আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। চেয়ারম্যান গ্রেফতার হলেও এখনো তার ছেলে রিফাতসহ এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। কেন কী কারণে তাদের এখনো ধরা হচ্ছে না সেটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে জামালপুর ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আরমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগার রয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। পুলিশের রিমান্ডে মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু সাংবাদিক নাদিম হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। বিচারকের সামনে হত্যার কথা স্বীকার করলে আদালত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাদিম। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় বাবু চেয়ারম্যান বাবুকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে নাদিম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন বাবু। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
মো. নাসিম উদ্দিন/এমএএইচ/জিকেএস