রাস্তা নিয়ে বিরোধে ‘একঘরে’ ৩ পরিবার
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে তিন পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে বারণ করা হয়েছে গ্রামের অন্যদের। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তারা হাটবাজারে এমনকি শিশুরা বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়ইউড়ি ইউনিয়নের মদনমুরত গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামের একটি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এটি রুস্তম আলী, সামছুল ইসলাম ও রাজন মিয়ার পরিবারের নিজস্ব সম্পত্তি। সম্প্রতি তারা এটি নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেন। এ নিয়ে একই গ্রামের শফি উদ্দিনের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধটি চরম আকার ধারণ করলে সালিশ বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে কোনো সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত শফি উদ্দিনসহ গ্রাম্য মাতব্বররা ওই তিনটি পরিবারকে একঘরে করে দেন। প্রায় ১৮ দিন ধরে ওই পরিবারগুলো একঘরে অবস্থায় রয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগও দিয়েছেন। এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানিও করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ওই ৩ পরিবারের সদস্যদের গ্রামের কারো সঙ্গে মিশতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কথা বলছে না তাদের সঙ্গে। হাটবাজারে যেতে পারছেন না তারা। তাদের গবাদি পশুও বাড়ি থেকে বের করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না পরিবারগুলোর শিশুরা। এ অবস্থায় মারাত্মক অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
একঘরে হওয়া পরিবারের রুস্তম আলী বলেন, আমাদের নারী ও শিশুরা রাস্তায় বের হলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, আমরা নিজেদের জমি তাদের নামে লিখে না দেওয়ায় তারা আমাদের একঘরে করে রেখেছে।
মদনমুরত গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য কুমেদ আলী জানান, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এটি রাস্তা ছিল। আগে গ্রামে কাগজপত্র করে দেওয়া হতো না। এ রাস্তা দিয়ে বেশ কিছু পরিবার চলাচল করছে যোগযোগ ধরে। কিন্তু হঠাৎ করে তারা রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। এটি তাদের ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা মুরুব্বীদের নিয়ে কয়েকবার বসে তাদের অনুরোধ করেছি রাস্তাটি যেহেতু যোগযোগ ধরে মানুষ ব্যবহার করছে যেন তারা এটি বন্ধ না করে। কিন্তু তারা সেটি শোনেনি। অনেক অনুনয় বিনয় করলেও তারা শোনেনি। পরবর্তীতে পঞ্চায়েত বসে তাদের বলেছে যে তোমরা তোমাদের মতো করে চলো।
বড়ইউড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, আমাকে একপক্ষ জানিয়েছে। অপরপক্ষের কোনো কথা শোনা হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে শুনেছি রাস্তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। উভপক্ষ বসে এটি সমাধান করা উচিত।
অভিযুক্ত শফি উদ্দিন বলেন, আমাদের উভয়ের পরিবারের যৌথ মালিকানাধীন একটি পুকুর আছে। এ পুকুরের পাড় শতাধিক বছর ধরে আমাদেরসহ বেশ কিছু পরিবারের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি রুস্তম আলীরা আমাদের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারা সালিশ মানেনি। একঘরে করা হয়নি। যার যার মতো করে চলতে বলা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়। হুমকি ধমকি দেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, একঘরে করে দেওয়ার বিষয়টি একপক্ষ অভিযোগ দিয়ে জানিয়েছে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানি হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি রাস্তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। ঈদের পর বিষয়টি নিয়ে আবারও বসবো। সরেজমিন দেখে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/জেআইএম