গ্যাস না থাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি খুলনায়
গ্যাস সংযোগ না থাকায় পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পাচ্ছেন না খুলনাবাসী। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হওয়ার যে কথা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন তার ২০ শতাংশও বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
খুলনার ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করলেও তাতে বাধ সেধেছে ‘গ্যাস’ না থাকার বিষয়টি। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না হলে খুলনায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকেই এ নগরীতে রয়েছে সুন্দরবন, শিল্পাঞ্চল, নদীবন্দরসহ রেল যোগাযোগ। তবে এর মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবন, নদীবন্দর ও রেল যোগাযোগ টিকে থাকলেও শিল্পাঞ্চল হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। পদ্মা সেতুর কারণে খুলনার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ছাড়া আর তেমন কোনো উন্নয়ন এখানে হয়নি।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। খুলনার উৎপাদিত কৃষি ও মৎস্য পণ্য দ্রুততার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। পরিবহন খরচও কমেছে আগের তুলনায় অনেক কম।
তবে ভারী শিল্পকারখানা স্থাপন করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্যাসের। গ্যাস ছাড়া শিল্প স্থাপন করে টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে পদ্মা সেতুর সুফল পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন গ্যাসের।’
খুলনা সদর থানা আওয়ীমী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কল্যাণে আমাদের এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে গেছি আমরা। এখন প্রয়োজন শুধু গ্যাস।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মুহা. আশরাফ উজ জামান বলেন, বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কারণে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈল্পবিক উন্নয়ন হয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ও সময় কমেছে। খুলনার কৃষি ও মৎস্যপণ্য দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। মোংলা বন্দরের প্রতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে খুলনায় কোনো ইকোনমিক জোন নেই। গ্যাস সরবরাহ নেই। ফলে এখানে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, গ্যাস ছাড়া বর্তমানে শিল্পকারখানা স্থাপন করা সম্ভব নয়। কারণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে পণ্য উৎপাদন করলে তাতে লাভ করার কোনো সুযোগ থাকবে না।’
তিনি বলেন, আমরা বহু আগে থেকেই খুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছি। গ্যাস ছাড়া বর্তমানে আধুনিকায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, যেভাবে ঢাকঢোল পেটানো হয়েছি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে, সেভাবে কিছুই হয়নি।
তিনি বলেন, ‘গ্যাস ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা বিএনপি সরকার যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছিল। সে কারণে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাও করেছিল। খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত পাইপও স্থাপন করেছিল বিএনপি সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজ আর এগিয়ে যায়নি। ফলে এখন কেউ এ অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চান না।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি এসএম নজরুল ইসলাম। তবে গ্যাস না থাকায় এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা প্রসারিত হয়নি বলে জানান তিনি। পদ্মা সেতুর আশীর্বাদকে কাজে লাগাতে গ্যাসের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন খুলনা চেম্বারের সাবেক এ নেতা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহসভাপতি শেখ আব্দুল বাকী বলেন, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে এ অঞ্চলের অনেক মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। যা আছে তার উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। খুলনা অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান তিনি।
খুলনার আরেক শিল্পপতি এস এম আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ দুই কমেছে। কিন্তু এ অঞ্চলের শিল্পকারখানার ব্যাপক প্রসারের ক্ষেত্রে যে জিনিস সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো গ্যাস। বর্তমানে গ্যাস ছাড়া কোনো শিল্প-কলকারখানা টিকে থাকতে পারবে না।
এসআর/জেআইএম