জমজমাট সবজি-ফুল-মাছের বাজার, গেম চেঞ্জার পদ্মা সেতু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ২৫ জুন ২০২৩

সবজি, ফুল আর মাছের জেলা যশোর। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে পদ্মা সেতু। পদ্মার দুই পাড়ের বিভক্তি দূর করা সেতু হাসি ফুটিয়েছে শত শত কৃষক আর মৎস্যচাষীর। এখন আর ফেরি ঘাটে সবজি, ফুল আর রেণু পোনা মরে-পচে একাকার হয় না। লোকসান গুনতে হয় না কোটি কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর এক বছরে তাই স্বস্তিতে যশোরের মানুষ।

যশোর জেলায় সারা বছর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় আট লাখ টন সবজি। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে পাঠানো হয়।

jagonews24

আরও পড়ুন> গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মোটরসাইকেল পার, ২ মাসে আয় ২ কোটি ৯৩ লাখ

সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে এই অঞ্চলের বৃহত্তম পাইকারি সবজির মোকাম বারিনগর সাতমাইল সবজির হাট। এই হাটে যশোর সদর, চৌগাছা, পাশের জেলা ঝিনাইদহের কৃষকদের উৎপাদিত সবজি পাইকারি বিক্রি হয়। এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ টন সবজি যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।

বারীনগর হাটের ইজারাদার আবদুস সোবহান জানান, আগে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা তেমন আসতেন না। কিন্তু এখন ঢাকার পাশাপাশি সিলেট, চট্টগ্রামের ব্যাপারীরাও আসছেন হাটে। অল্প সময়ের মধ্যে সবজি কিনে আবার তারা ফিরেও যাচ্ছেন। আগে এই সবজি নিয়ে ফেরিতে পদ্মা পার হতে ৭ থেকে ১২ ঘণ্টা, কখনও কখনও তারও বেশি সময় লাগতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় তারা ঢাকা চলে যাচ্ছেন।

jagonews24

তিনি আরও জানান, আগে সবজি বিক্রি হবে কি না এমন পরিস্থিতিতে সবজির দাম পেতো না কৃষকরা। এখন সবজির দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে পদ্মা সেতু। বাইরের জেলার পাইকাররা আসাতে স্থানীয় পাইকারদের সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ন্যায্যমূল্যে কিনছেন তারা। ফলে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন এবং দারুণ খুশি তারা।

হাটের ইজারাদার ও সবজির ব্যাপারীরা বলছেন, পাঁচ টনের এক ট্রাক সবজি যশোর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিতে আগে ট্রাক ভাড়া লাগতো ২৫ হাজার টাকা। এখন পথ কমায় ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ভাড়া লাগে। সময় কমে যাওয়ায় সবজি খুব একটা পচে না। ঘাটের দেরিতে আর ঢাকার যানজটে পড়ে শহরের ঢুকতে বিড়ম্বনাও কমে গেছে। এককথায়, পদ্মা সেতু সবজি চাষীদের ভাগ্য ফিরিয়ে দিয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন> জলের ‘পাগলা ঘোড়া’ ডাঙায় ঘুমায়

হৈবতপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম চলতি মৌসুমে দেড় একর জমিতে করলা, দুই বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে পটল আর করলা তুলে সাতমাইল বারীনগরে বিক্রি করতে এসেছিলেন। হাটে সবজি নিয়ে যেতেই পাইকারদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পেরে বেজায় খুশি তিনি। জানালেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে সবজি চাষ করেন। হাটে পাইকারি দরে প্রতি কেজি পটল ৩৭ টাকা, করলা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বললেন, এই সময়ে সবজির এমন দাম পাবো ভাবিনি। গত বছর এই সময়ে পটল ১০ থেকে ১৫ টাকায় আর করলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম।

jagonews24

সবজির মতো ফুলও পদ্মা সেতুর কল্যাণে চলে যাচ্ছে নানা প্রান্তে। তিন ঘণ্টায় পদ্মা পেরিয়ে যাওয়ায় ফুল নষ্ট বা বাজার ধরতে না পারার আক্ষেপ ঘুঁচেছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুল চাষিরা বাণিজ্যিক ফুল চাষের গোড়াপত্তন করেছেন। এ উপজেলার প্রায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপ, লিলিয়ামসহ ৭২ ধরনের ফুলের চাষ হয়। বছরে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

jagonews24

তিনি বলেন, ফুল যশোর থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে পরিবহন। আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এক সময় ফেরি ঘাটে ফুলের মান নষ্ট হয়ে যেত। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আটকে থেকে ফুল যেমন নষ্ট হতো, তেমনি সময়মত ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে না পেরে বাজার হারাতে হতো। এখন গদখালীর ফুল তিন থেকে চার ঘণ্টায় ঢাকা শহরে চলে যাচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ীরা সরাসরি গাড়ি নিয়ে গদখালীতে আসছেন। তাদের পছন্দ মতো ফুল স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু ফুল ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে দিয়েছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন> বদলেছে কুয়াকাটার চিত্র, পর্যটক দ্বিগুণ

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, মৎস্যপল্লী খ্যাত যশোরের চাঁচড়া ও আশপাশের এলাকার নার্সারিতে বছরে কয়েক লাখ টন রেণু পোনা উৎপাদন হয়। যা দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ করে। আগে ঢাকাসহ পদ্মার ওপারে রেণু পোনা পাঠাতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। ঘাটে যানজটের কারণে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যেত। রেণু পোনা মরে-পচে অন্তত ৩০ শতাংশ ক্ষতি হতো।

এইচআরএম/এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।