সংকট আর শঙ্কার পদ্মা পাড়ি এখন ভয়হীন

আরাফাত রায়হান সাকিব আরাফাত রায়হান সাকিব , মুন্সিগঞ্জ মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:৩২ এএম, ২৫ জুন ২০২৩

মাকে চিকিৎসা করিয়ে ঢাকা থেকে একবার বাড়ি ফেরার সময় শীতের রাতে ঘনকুয়াশায় ফেরি বন্ধ হয়েছিল। পুরো রাত ভাই আর মাকে নিয়ে মাওয়া ফেরিঘাটে ছিলাম। কী যে কষ্ট হয়েছে, সারারাত ভয় নিয়ে বসেছিলাম ফেরির অপেক্ষায়। ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এরপর সবসময় চেষ্টা করতাম রাতে এই পথে না চলার জন্য।

তবে পদ্মা সেতু চালুর পর এখন দিন কী রাত, কোনো সমস্যাই নাই, যত রাত হোক আমাদের যাতায়াতে আর কোনো ভয় নাই, ভোগান্তিও নাই। এখন প্রতিমাসেই বিভিন্ন কারণে ঢাকায় যাওয়া আসা করি।

jagonews24

গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে আলো ঝলমলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পেরোতে পেরোতে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানী থেকে ফরিদপুরগামী বাসের যাত্রী নিলুফার আক্তার।

শুধু নিলুফারই, এক বছর আগেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রায় পদ্মা পারাপারে ফেরিঘাট ছিল সবার জন্য ভোগান্তির। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি দেখা দিতো রাত নামলে। দিনের আলো ফুরিয়ে নামা ঘোর অন্ধকারের সঙ্গে বাড়তো নানা সংকট আর শঙ্কা, যাত্রীদের কাছে যা ছিল রীতিমতো বিভীষিকা।

jagonews24

এ পথে জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতকালে নির্ঘুম রাত ফেরিঘাটে কাটানোর অভিজ্ঞতা অজস্র মানুষের। তবে পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে সেইসব দিন। উদ্ধোধনের বর্ষপূর্তির লগ্নে যাতায়াতকারীরা বলছেন, শুধু ভোগান্তি লাঘবই নয়, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঁধার রাতের যাতায়াতকে করেছে ভয়হীন। দিন-রাতে এখন সমান গতিতে বাধাহীন ছুটে চলায় উচ্ছ্বাস সবার।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গড়ে প্রতিদিন সেতু পাড়ি দিচ্ছে সাড়ে ১৫ হাজারের অধিক যানবাহন। প্রথম বছরে পদ্মা সেতুতে দৈনিক টোল আদায় হয়েছে গড়ে দুই কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি। যার অর্ধেকাংশের চলাচল রাতের বেলা। দূর-দূরান্ত কিংবা সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও যানবাহনের যাতায়াত এখন নিরাপদ।

jagonews24

পদ্মা সেতু উত্তর থানার মোড় থেকে ফরিদপুরগামী বাসে উঠে কথা হয় আরও বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। রাতে যাত্রার ভোগান্তির স্মৃতি মনে করে এখন স্বস্তির যাত্রায় আনন্দ প্রকাশ করেন তারা। এক যাত্রী সায়েম হোসেন বলেন, আমাদের আর রাতে যাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা করতে হয় না। গভীর রাতেও যখন জরুরি প্রয়োজন হয় তখনই ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে পারি। আগে তো নদীতে ঢেউ, আবহাওয়া খারাপ বিভিন্ন কারণে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হতো। রাতে হতো বেশি ভোগান্তি, কোনো নিরাপত্তা ছিল না। নদী পাড়ি দিতেই যেত এক-দেড় ঘণ্টা, এখন ৮-১০ মিনিটেই সেই নদী পাড়ি দিই।

ট্রাকচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, যশোর-বেনাপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় মালামাল সরবরাহের কাজ করি। রাতে আগে ঘাটে অপেক্ষ করতে হতো। আমাদের খাবার দাবার কিছুই ঠিক ছিল না। গাড়িতে থাকা মালামাল চুরির ভয় ছিল, চাঁদাও দিতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে এখন সাঁ সাঁ করে যাই। বাড়তি খরচও হয় না, কোনো ঝামেলাও নাই।

jagonews24

একই মন্তব্য এই পথে চলাচলকারী প্রায় সব যাত্রী-চালকদের। তাদের মতে, ভোগান্তির এইপথে আগে যেখানে রাত নামলে যানবাহনে চলাচল কমে আসত, এখন সেখানে দিন-রাত নেই। সমান গতিতে যে কোনো সময় যাতায়াত করতে পারছেন তারা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথাও তাদের মুখে মুখে।

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসাইন বলেন, পদ্মা সেতুর একবছর হলো। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পদ্মা সেতু ও আশপাশের সড়কে আমাদের দিনরাত সার্বক্ষণিক টহল থাকছে। বিশেষ করে দিনের চেয়ে রাতে যেন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য বিশেষ তৎপরতা থাকছে। যে কারণে গত এক বছরে রাতে যাত্রীদের কোনো বিপত্তিতে পড়তে হয়নি। আগামী দিনগুলোতেও এই সেবা থাকবে।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে। এছাড়া অতিগতি, ওভারটেকিং যেন না করা হয়।

এদিকে, দ্রুতই পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় চালু করা হবে অটোমেটিক টোলিং সিস্টেম (ওটিসি)। এতে টোল আদায়ে আসবে আরও গতি।

jagonews24

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, অটোমেটিক টোল সিস্টেমের কাজ শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় এটি চালুর জন্য প্রস্তুত। ঈদযাত্রার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। কোরিয়ান এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ঈদের পর সেটি চালু করবো।

তিনি বলেন, ওটিসি চাল হলে ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যে টোল আদায় হবে, ক্যাশ কোনো লেনদেন থাকবে না। এতে টোল প্লাজায় টোলের জন্য কোনো সময় লাগবে না। টোল আদায়ে আরও গতি আসবে।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।