ঈদের আগে মসলা কিনতে নাভিশ্বাস
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আছে আর মাত্র চারদিন। এই ঈদে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা, হলুদ, মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গসহ মসলাজাতীয় সব পণ্যের চাহিদা থাকে বেশি। আর তাই ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ফেনীর বাজারে মসলার ঝাঁজ তুঙ্গে উঠেছে।
ক্রেতারা বলছেন, চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দামও। কয়েকটি মসলার দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
বাজারে মসলা কিনতে এসে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ডলার, এলসি সংকটের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ীদের রয়েছে সিন্ডিকেট। খুচরায় লাগামহীন দাম রাখলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ভুগতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অতিরিক্ত দামের কারণে মসলা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
ফেনী বড় বাজার ও পৌর হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জিরা ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১ মাস আগেও ছিল ৬০০ টাকা। প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকার বিক্রি হয়েছে। রসুনের দাম ৩০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকায়, যার মধ্যে দেশীয়গুলো ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনো মরিচ ১১০ টাকা কেজি থাকলেও এখন ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়। লবঙ্গ পাইকারিতে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায় যা আগে ছিল ৯০০ টাকা। বাজারে এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৫০০ টাকায়, দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়, জাইফল বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ টাকায় আর গোলমরিচের কেজি ৬০০ টাকা।
তবে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে পেঁয়াজের দামে। সপ্তাহখানেক আগেও ৯০ টাকা পেঁয়াজের কেজি থাকলেও বর্তমানে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ধনিয়া ১১৫ টাকা কেজি থেকে কমে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এছাড়াও তেল ১৯০ টাকা, আটা ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে প্যাকেটজাত মসলার দামও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ২০০ গ্রাম প্যাকেট রাঁধুনির মসলা ৬০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। বিরিয়ানির মসলা ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। যা পরিমাণেও অনেক কম।
দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে ফেনী বড় বাজারের দরগাহ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী লুৎফুর রহমান বলেন, দেশে পরিমাণমতো খাদ্যপণ্য মজুত আছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে সবকিছুর দাম বাড়তি। রমজানের ঈদের পর থেকেই সব মসলার দাম দিগুণ বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিন্ডিকেটের কারণে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ যোগান থাকলেও বাজারে পণ্য ছাড়ে না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে ফেলে তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চিনি বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে চিনির বস্তাও বিক্রি করছে না, ১০ বস্তা অর্ডার দিলে পাই ২ বস্তা৷
আবদুল মোতালেব নামে বাজারের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, খোলা মসলা ছাড়াও প্যাকেটজাত মসলার দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সস কেনা ছিল ১৫৫ টাকা এখন কেনা পড়ে ২১০ টাকা। প্রতিটি রাঁধুনির মসলার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আমাদের কেনা ও খরচ পড়ছে বেশি। সাধারণ মানুষ কী করবে, ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ সব জায়গায় দাম বেশি।
বাজারে মসলা কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদকে সামনে রেখে মানুষের যেসব পণ্যের প্রতি চাহিদা থাকে, সেগুলোর দাম সবসময় বাড়ে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সরকারও জিম্মি। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
বাজার করতে আসা ফাতেমা আক্তার খেয়ালী নামে এক গৃহিণী বলেন, ১০ হাজার টাকার বাজার করলেও চোখে পড়ে না। মসলার পাশাপাশি অন্যান্য সব পণ্যের দাম বেশি। এভাবে চললে চলার উপায় থাকে না। একতো ঈদের খরচ, এর মধ্যে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। সরকারের উচিত নিয়মিত বাজার তদারকি করা, অন্যথায় সাধারণ মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ঈদের পর দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
ফেনী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, দ্রব্যমূল্য যেন ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে, কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শহরের বড় বাজার ও পৌর হকার্স মার্কেট কমিটিগুলোকে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/জেআইএম